অনুপ্রবেশকারী ‘কাউয়া’দের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে আওয়ামী লীগ

কাউয়া নেতাদের বিরুদ্ধে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান! ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই দলটিতে ভেড়ার প্রবণতা শুরু হয় ‘হাইব্রিড’ বা ‘কাউয়া’ নেতাকর্মীদের। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রবণতা বাড়ে বহুগুণ। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে চলা সন্ত্রাস-নাশকতার মামলা ও পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে বিএনপি-জামায়াতের বহু নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের সংখ্যা ইতিমধ্যে লাখের অঙ্ক ছুঁয়ে গেছে। আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই হত্যা-সন্ত্রাস-নাশকতা মামলার আসামি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

একাত্তরে পাক বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির কর্মকর্তা ও তাদের সন্তান-স্বজনরাসহ জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধীরা নতুন সদস্য সংগ্রহের এই অভিযানে নানা কৌশলে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছেন। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এই ‘কাউয়া’দের অনুপ্রবেশ। গঠনতন্ত্রের ৫(১) ধারা অনুযায়ী, দলে যোগ দিতে হলে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র মেনে প্রাথমিক সদস্য পদের জন্য আবেদন করতে হয়। সে আবেদনে দলের স্থানীয় ইউনিট সুপারিশ করলেই শুধু আগ্রহীদের দলে যোগদান করানো যেতে পারে; কিন্তু এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। নাশকতা, গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও কোনো কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগের সদস্য হচ্ছেন। বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা।

এদিকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত তা কেউ বলতে পারছেন না। দলের দফতর এবং প্রচার সেলের নেতাদের পাশাপাশি শীর্ষ নেতারাও এর সঠিক সংখ্যা জানেন না। তারা বলছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটা সেন্টার না থাকায় নির্দিষ্ট করে সদস্য সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। তবে দফতর বিভাগের সূত্র মতে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড-ইউনিট কমিটি ও দলের সব শাখার প্রাথমিক সদস্য মিলিয়ে এ সংখ্যা তিন কোটি হতে পারে। আর এবার নতুন দুই কোটি সদস্য হলে মোট ৫ কোটি হবে আওয়ামী লীগের সদস্য।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগে এই যোগদান প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই দলের হাইকমান্ড বারবার বিএনপি-জামায়াত থেকে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে ব্যপারে সকল পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক করে আসছে। কিন্তু তারপরও এই যোগদান বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাও রয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও সংসদ সদস্য এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্য দল থেকে আসা সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, যার খেসারত এখন দলকে দিতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনাই তার সাক্ষী বলে মনে করেন অনেকে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেন এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন। এরপর বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

যে কোনো দল সরকার গঠন করলেই সুর বদলিয়ে ভিড়ে যায় অনেক সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী। তারা সুযোগ-সুবিধা শিকারে মত্ত হয় আর বদনাম হয় সরকারের। এমন বাস্তবতায় শুদ্ধি অভিযানের পথে হাঁটছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এ জন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত করছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগের কাছেই ফিরিয়ে দিতে চান দলীয় সভানেত্রী। তাই তিনি চান এখনই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে। এ জন্য তালিকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী এবং যাদের হাত ধরে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাদের তালিকা করার কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই।

গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগে হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের হাত ধরে জামায়াতে ইসলামীর আমির থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ২ থেকে ৩ হাজার নেতা আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। একইভাবে বিএনপির নেতারাও আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত থেকে ফুলের মালা নিয়ে নৌকায় উঠেছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে নাশকতা, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ মাদক মামলা। মূলত মামলা থেকে বাঁচতেই তাদের আওয়ামী লীগে যোগদান। তবে তাদের এ যোগদানকে প্রথমে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও হঠাৎ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতের যোগ দেওয়াকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন দলটির হাইকমান্ড। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলের নীতিনির্ধারক ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিলে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হবে। এর মাধ্যমে দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে। অনুপ্রবেশকারীরা দলের পদ পদবিতে থাকলে তাদের বাদ দেওয়ার পাাশাপাশি যারা তাদের পুনর্বাসন করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর