কুমিল্লার ১৩ প্রবীণ সাংবাদিককে আপনজন সন্মাননা প্রদান

সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে মফস্বল সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। মফস্বল সাংবাদিকদের উপেক্ষা করে কোনো সংবাদপত্রই সফল অবস্থানে পৌঁছতে পারে না। মফস্বলের সাংবাদিকরা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও অভাব অভিযোগের খবর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে পত্রিকা অফিসে পাঠান। বলা যায়, গণমানুষের সঙ্গে মিশে একজন ভুক্তভোগীর হাঁড়ির ভেতরের খবর পর্যন্ত বের করে নিয়ে আসেন মফস্বলের সাংবাদিকরা।

এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনও কখনও স্থানীয় প্রশাসনের পরোক্ষ হুমকি, প্রভাবশালীদের চোখ রাঙানি, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও পান তারা। তবুও হাল ছাড়েন না। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করা গ্রামীণ মানুষের গান গেয়ে যান তারা।

গ্রামীণ মানুষের গান গেয়ে যাওয়া এমনি একজন মানুষ এবিএম আতিকুর রহমান বাশার। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সাংবাদিকতার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তার নাম। সবার পরিচিত মুখ। তবে অন্য দশজন সাংবাদিকের চেয়ে আলাদা তিনি। সাংবাদিকতার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব, সততা ও সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা অন্যদের চেয়ে তাকে আলাদা করেছে। দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েও বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশে এখনও অঙ্গীকারবদ্ধ তিনি।

কর্মের স্বীকৃতিসরুপ সাংবাদিক বাশারসহ কুমিল্লার ১৩ প্রবীণ সাংবাদিককে আপনজন সন্মাননা দেয়া হয়। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলার ১৩জন গুণী সাংবাদিককে আপনজন সন্মাননা দেওয়া হলো শনিবার। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলা শাখার আয়োজনে তাদের সন্মাননা প্রদান করা হবে। শনিবার নগরীর রাজগঞ্জ এলাকার ক্যাপসিকাম পার্টি সেন্টারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এ আপনজন সন্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মননায় সাংবাদিক বাশার ছাড়াও সংবর্ধিত গুণী অন্য সাংবাদিকরা হলেন- লাকসাম উপজেলার মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা করছেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি। দাউদকান্দি উপজেলার হাবিবুর রহমান হাবিব। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা করছেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের কুমিল্লা উত্তর জেলা প্রতিনিধি। হোমনা উপজেলা থেকে এটিএম মোর্শেদুল ইসলাম শাজু। তিনি ১৯৯০ সালে থেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত। তিনি দৈনিক আমাদের কুমিল্লার হোমনা প্রতিনিধি। নাঙ্গলকোট উপজেলার মজিবুর

রহমান মোল্লা। ১৯৮৯ সালে সংবাদপত্রে যুক্ত হওয়া এ গুনণীজন দৈনিক ইত্তেফাকের নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি। মুরাদনগর উপজেলার শাহ আলম জাহাঙ্গীর। তিনি ১৯৮৩ সালে সংবাদপত্রের সাথে মিতালী করেন। কাজ করছেন একাধিক জাতীয় দৈনিকে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে সৈয়দ আহাম্মদ লাভলু। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। দৈনিক বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। বুড়িচং উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৮৫ সালে তিনি সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন। নানান সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত তিনি। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার এম এ কুদ্দুস। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি সংবাদপত্রে লিখেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক রূপসী বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক। চান্দিনা উপজেলার রিপন আহমেদ ভূঁইয়া। ১৯৮৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ভোরের কাগজের উপজেলা প্রতিনিধি। বরুড়া উপজেলা থেকে মোহাম্মদ মাসুদ মজুমদার। তিনি দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকায় বহুবছর কাজ করছেন। মেঘনা উপজেলার মাহমুদ বিপ্লব সিকদার। ১৯৯৯ সালে সাংবাদিকতা শুরু তার। তিনি দৈনিক আমাদের কুমিল্লার মেঘনা প্রতিনিধি। তিতাস উপজেলার নাজমুল করিম ফারুক। তিনি গত দুই দশক পত্রিকার সংবাদকর্মী। তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার তিতাস প্রতিনিধি।

আপনজন সন্মাননার বিষয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা এমরান বলেন, গত ১৭ বছর সহকর্মীদের প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ইতিপূর্বে তিনটি পৃথক অনুষ্ঠানে কুমিল্লার সাতজন প্রবীণ সহকর্মীদের সংবর্ধিত করেছি। এছাছাও সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ, করোনায় তাদের পাশে থাকা বিপদ আপদে দেখাশোনা করা, নবীনদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণসহ বহু কাজ করেছি সমিতির ব্যানারে। প্রথম বারের মতো কুমিল্লার ১৭ উপজেলা থেকে ১৩ জন গুণী সহকর্মীকে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। সমিতির মানদ-ের সাথে চার উপজেলায় আমরা প্রবীণ সংবাদকর্মী পাইনি। এ পথচলায় যারা আমাদের সহযাত্রী হয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞাতা।

সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর কল্যাণকামী সব পেশা মহৎ হলেও সাংবাদিকতা পেশা সবার ঊর্ধ্বে। এটাকে পেশা বলা চলে না; মানবসেবা বলাই শ্রেয়। এই সেবায় সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা মূল হাতিয়ার। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নির্যাতিত-শোষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের কথা। সৎ সাংবাদিকতা সমাজকে কলুষমুক্ত করে আর সভ্যতাকে করে আলোকিত।

এমন আদর্শকে ধারণ করে প্রায় গত ৪৭ বছর ধরে মফস্বলে সাংবাদিকতা করছেন সাংবাদিক বাশার। কুমিল্লার সমস্যা-সম্ভাবনা ও গণমানুষের কথাগুলোকে অবিরাম বলে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে তার অবিরাম পদচারণা। তিনি একাধারে সাংবাদিক, কলামিষ্ট, রাজনীতিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।

কাগজে- কলমে নাম এবিএম আতিকুর রহমান বাশার হলেও সবার কাছে তিনি ‘সাংবাদিক বাশার’ নামেই পরিচিত। তার আদি নিবাস কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ভূষনা গ্রামে হলেও বাবার সরকারী চাকুরীর কারনে ১৯৫৯ সালে কুমিল্লর মনোহরপুর মুন্সেফ বাড়ীতে তার জন্ম। স্ত্রী হুর বানু আক্তার পলি একজন সফল নারী উদ্যেক্তা পাশাপশি সাংবাদিকও। এক ছেলে-দুই মেয়ের মধ্যে প্রথম মেয়ে তাসকিয়া রহমান প্রতিভা অনার্স শেষ করে কুমিল্লা সিসিএন বিশ^বিদ্যালয় কলেজে এলএলবি অনার্সে পড়ছেন। আরেক মেয়ে আয়েশা রহমান প্রজ্ঞা দেবীদ্বার মফিজ উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনীতে এবং ছেলে ওয়াফি রহমান ইউসুফ দেবীদ্বার এডভান্স ন্যাশনাল কিন্ডার গার্ডেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন।

সাংবাদিক বাশারের বাবা দেবীদ্বার উপজেলা ভূষণা গ্রামের (অব.) সুবেদার প্রয়াত আলী আকবর ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী সংগঠক। তিনি ক্যাশ হাবিলদার নামেও পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকারে ভূষণা রাম্পুর এলাকার যুবসমাজকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনে অনুপ্রাণীত করে ভূষণা গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি দল ভারতের মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুলিশে চাকরি করা অবস্থায় এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের নিরাপদে ভারত সীমান্ত পারাপাড়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কুমিল্লা মনোহরপুর মুন্সেফ বাড়ীতে থাকার সুবাদে মনোহরপুর এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ভারতে পাড়াপাড়, নারীদের সমভ্রম এবং তাদের সম্পদ রক্ষায় অভূতপূর্ব অবদান রাখেন তার বাবা। প্রয়োজনীয় সময়ে ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট এলাকায় অবস্থান করে বাস যাত্রীদের নিরাপদে পারাপারে সহযোগীতা করতেন। তিনি ভালো উর্দু বলতে পারতেন। পাক সেনাদের গাড়ি তল্লাসীর সময় তাদের সাথে কথোপকতন এবং দেশের কল্যানে মোনাজাতের মাধ্যমে পাক সেনাদের মানষিক পরিবর্তনে বাস তল্লাসীর কথা ভুলিয়ে এক জাদুকর ভূমিকা পালন করে নিরাপদে যাত্রীদের পারাপাড়ে সহযোগীতা করতেন। চাকরি জীবনের ৩৭ বছরের ৩৬ বছরই কুমিল্লায় কাটিয়েছেন। ক্যাশ হাবিলদারের দায়িত্ব পালনকালে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার পুলিশ বাহিনীর বেতন ভাতাদী পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সোনালী ব্যাংক থেকে ট্রেজারী এবং এসপি অফিসে টাকা লেন-দেন কালে বহুবার ব্যাংক কর্তপক্ষের ভুলের কারনে ৫টাকার বান্ডেলের স্থলে ৫০টাকা ১০টাকার বান্ডেলের স্থলে ১০০ টাকার বান্ডেল প্রদানসহ অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ না করে তা ফেরত দেয়ার বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিলেন। যার কারনে সোনালী ব্যংক এবং ট্রেজারীর কর্মকর্তাদের অনুরোধে কর্মজীবনে বদলীর আদেশ পাননি কখনো তার বাবা। ধার্মিকতা এবং সততার কারনে এক বিশ্বস্ততা নিয়ে কুমিল্লা এসপি অফিসেই ৩৬বছর কর্ম জীবন পরিচালা করে ১৯৮৮ সালের জুন মাসে অবসরে আসেন। এরই মধ্যে তার সততার সাথে দায়িত্ব পালনে সরকার কর্তৃক গোল্ড, রৌপ্য, ব্রোঞ্চসহ বিভিন্ন সময়ে ৭টি মেডেলে পুরস্কৃত হয়েছিলেন তার বাবা। তিনি এলাকার বহু লোকজনকে পুলিশ বাহিনী ও সোনালী ব্যাংকে চাকরি দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে ৪ এপ্রিল পরলোক গমন করেন তার বাবা ও মা জাহানারা বেগমকে ১৯৯৩ সালের ১১ আগষ্ট হারান সাংবাদিক বাশার। চার ভাই- তিন বোনদের মধ্যে সাংবাদিক বাশার তৃতীয়।

সাংবাদিকতার একাল-সেকাল ও মফস্বলে দীর্ঘ পথচলার অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধতার বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। কথার ফাঁকে ফাঁকে বললেন জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথাও।

সাংবাদিক বাশার বলেন, শৈশব থেকেই আমার ভেতরে অজানাকে জানার কৌতূহল কাজ করত। বাবা বরাবরই উৎসাহ দিতেন।

দেবীদ্বারের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও সেসময় বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে কুমিল্লা শহরেই আমাকে থাকতে হয়েছে বেশির ভাগ সময়। ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা শহরের হোচ্ছা মিয়া হাই স্কুলে দশম শ্রেনীতে লেখাপড়া করা অবস্থায় ন্যাপের মূখপত্র সাপ্তাহিক নতুন বাংলা প্রত্রিকা দিয়ে আমার সাংবাদিকতা ও শিক্ষাজীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা শহর ও দেবীদ্বারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করি। শিক্ষা জীবনে ছোটনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক, দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারী কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৮৬ সালে বিএ বিএ পাস করি।

সাংবাদিকতা পেশার শুরুটা উল্লেখ করে বাশার বলেন, ১৯৭৬ সালে তৎকালীন ন্যাপের মূখপত্র সাপ্তাহিক নতুন বাংলায় আমার লেখা ‘কুমিল্লার দুঃখ গোমতী’ শীর্ষক নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ প্রতিবেদনটি নিয়ে ১৯৭৯ সালের সংসদে ন্যাপ প্রধান তখনকার এমপি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ তুমুল আলোচনা করেন যারই ফলশ্রুতিতে আজকের গোমতীর বেরী বাঁধ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ রিপোর্টের পর থেকেই স্বপ্ন নিয়ে দৈনিক বাংলার বানী, সংবাদ, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলোসহ অসংখ্য জাতীয় ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ম্যাগাজিন, স্মণিকায় কাজ করেছি। বর্তমানে এখনো কালের কন্ঠ ও দৈনিক কুমিল্লার কাগজে সাংবাদিকতা করছি।

সাংবাদিকতার পেশাকে বেছে নিতে সহযোগিতা পেয়েছি পরিবারের সবার। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতার বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন ন্যাপ প্রধান প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তার অবদানের কথা আজও ভুলতে পারিনি।

সাংবাদিক জীবনে বাশার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার নাম আজ জেলার গ-ি পেরিয়ে দেশ-বিদেশেও স্থান পেয়েছে। সাংবাদিক বাশার হিসেবে সবাই তাকে এক নামে চেনেন।

সাংবাদিক বাশার বলেন, এদেশে শুধু কর্মস্থলের ভিন্নতার কারণে সাংবাদিকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শহরে সাংবাদিক ও মফস্বল সাংবাদিক। মফস্বল সাংবাদিকরা একেতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত, তার ওপর শহরে সাংবাদিকদের তুলনায় তাদের জীবনের ঝুঁকিটাও অনেক বেশি। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার অপরাধে দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অনেক বিরম্বনায় পড়তে হয়েছে।

সাংবাদিক হিসেবে নিজের ওপর হয়রানীর বর্ণনা দিয়ে বাশার বলেন, অনিয়ম-দূর্নীতি ও অসহায় মানুষের পক্ষে সংবাদ লিখতে গিয়ে গত ২০০৬ সালে একটি মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলাও খেয়েছি। তবে ঠান্ডা মাথায় দুস্কৃতিকারীদের বুঝিয়ে দিয়েছি এসব হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা হামলা করে লাভ নেই। সত্যকে ধামাচাপা দেয়া যায় না। আমার লিখনির ওপর অনেক অসহায় নির্যাতিত পরিবার আইনি সহায়তাসহ সঠিক বিচার পেয়েছেন।

বাশার বলেন, স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় সুন্দর আগামীর পথে। অজানাকে জানার কৌতূহল, শিল্প-সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, সামাজিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি মানুষকে অলঙ্কিত করে। আর পেশাদারিত্বের প্রশ্নে আমি অবিচল।

আমি স্বপ্ন দেখি- তরুণ সমাজকে নিয়ে। তরুণদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়েই একটি কলুষমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব। কেননা তরুণরা একদিন সমাজের দায়িত্ব নেবে। তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হলে অসাধ্য কাজও সাধন হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তরুণদেরকে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে।

এ ছাড়া সাংবাদিক বাশার তরুণদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে মানুষকে উদ্ধুধ্ব করছেন। সুবিধাবঞ্চিত ও আয়োসহীন একজন মফস্বল সাংবাদিক হওয়ার পাশাপশি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও টানা দীর্ঘ ৩৬ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি, ২০১৬ সালে ওই পদ থেকে সড়ে দাড়ান। বর্তমানে এ প্রেসক্লাবের উপদেষ্টার পদে থেকে দেখভাল করছেন। সব সময় অসহায় ও অসুস্থ সাংবাদিকসহ সাধারন সুবিদা বঞ্চিত মানুষদের সেবা ও সহায়তা করে যাচ্ছেন বাশার।

বাশার বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা। এটাকে কেউ কেউ আবার নেশা হিসেবে মানতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে এটাও ঠিক যে সঠিক প্রশিক্ষণ, পেশাদারিত্বের অভাব, অধিক টাকার লোভ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাংবাদিকদের মাঝে বিভক্তি বাড়ছে। অনেক সময় সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে সাংঘাতিক, হলুদ সাংবাদিক, চাঁদাবাজ সাংবাদিক, সিন্ডিকেট সাংবাদিক, বিজ্ঞাপন সাংবাদিক, রাজনৈতিক সাংবাদিক, গলাবাজ সাংবাদিক, এমনি এমনি সাংবাদিক, ক্রেডিট পরিবর্তন সাংবাদিক, দালাল সাংবাদিক ইত্যাদি অসুন্দর অভিধায় অভিহিত করা হয়। এর অবসান হওয়া জরুরি।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা ও মিডিয়াগুলোর কর্তৃপক্ষের স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা পরিত্যাগ করতে হবে। কর্মদক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে সাংবাদিকতার আড়ালে তথ্য বাণিজ্যের বদলে তা তথ্যসেবায় যেন নিবেদিত হয়। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে; তা হলো মফস্বল সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার বুনিয়াদী প্রশিক্ষণসহ বেশি বেশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করা।

অপসাংবাদিক গোত্রের সদস্য খুবই কম- বিশ্বাস করতে ভালো লাগে। আমরা চাই, ভালো সাংবাদিকদের সাহায্যে হলুদ সাংবাদিকদের অবসান হোক। একটি সংবাদপত্র নিজেই দেশের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে- সাংবাদিক আর্থার মিলারের এ কথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আমরা চাই, সাংবাদিকদের লেখনি সমাজের আয়নায় পরিণত হোক। যা দেখে মানুষ সচেতন হবে। তাদের লেখা পড়ে মানুষ ভালো কিছু শিখবেন। উৎসাহিত হবেন। ভালো কাজ করতে অনুপ্রেরণা পাবেন। আমরা চাই, এলাকার অন্যায়, অত্যাচার, বঞ্চনা, শোষণের বিপক্ষে সাংবাদিকের কলম ও ক্যামেরা যথাযথ কাজ করুক ও ভালো কাজের প্রশংসার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠুক। মফস্বল সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজ উপকৃত হোক। গ্রাম-বাংলার কল্যাণে মফস্বল সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর