অসহায় হয়ে পড়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ!

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।

কোথাও গেলে তার সঙ্গী হয় হুইল চেয়ার। বয়সের ভারে মুঠোফোনও অনেক সময় ঠিকমতো ধরে রাখতে পারেন না। স্বাক্ষর করতে গেলে আগের মতো আর হাতও ঠিকঠাক কাজ করে না। তবু শরীর-মন না চাইলেও দলে প্রমোশন-ডিমোশন চলছে তার স্বাক্ষরে।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, পার্টিতে একটি সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী হয়ে পড়েছে যে, সাবেক এই রাষ্ট্রপতি না চাইলেও তাকে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে। এ ছাড়া পরিবার বলতে পাশে রয়েছেন একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদ। স্ত্রী পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ গুলশানে আলাদা থাকেন। দেখভাল করেন কর্মচারীরা। সব মিলিয়ে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় অনেকটা অসহায় অবস্থায় আছেন এইচ এম এরশাদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, দলে যত সিদ্ধান্ত হয় বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যত সিদ্ধান্ত হয়েছে তার অধিকাংশ সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে করেছেন। বিশেষ করে ২১ মার্চের পরই দলে ও সংসদে রওশন এরশাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, এইচ এম এরশাদকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। দল থেকে কেউ বাদ গেলে এই সিন্ডিকেটের লাভ, নতুন যোগ দিলেও তারাই লাভবান। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের কমিটি, নির্বাচনে মনোনয়ন, এরশাদের নাম করে প্রশাসনে বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়া, প্রশাসনে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য সবকিছুই এরা নিয়ন্ত্রণ করেন। এদের তোয়াজ করেই দলের নেতৃত্ব ধরে রাখতে হয়।

আর শেষ বয়সে এসে এই সিন্ডিকেটের কাছেই অসহায় হয়ে পড়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ২০ মার্চ ৯০তম জন্মদিন পালন করেন এরশাদ। রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছেন, ‘হয়তো এটাই আমার শেষ বক্তৃতা।’ পরদিন ছোট ভাই জি এম কাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে দেখা করতে গেলে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, ‘তুমি দলকে ভালো চালাচ্ছো। তোমাকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করিনি।’ তার পরদিনই ব্যর্থতার অভিযোগে পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দেন এরশাদ।

সাংগঠনিক নির্দেশে এরশাদ বলেন, ‘ব্যর্থতার কারণে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’ ওই বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার দায়িত্বে জি এম কাদের থাকবে কিনা তা পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।’ কিন্তু পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পরদিনই সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকেও কাদেরকে সরিয়ে দেন।

সে পদে বসান স্ত্রী রওশন এরশাদকে। সূত্র জানান, জি এম কাদেরকে পদচ্যুতই শেষ নয়; দলের নেতা-কর্মীদের সামনে আরও নাটক অপেক্ষা করছে। কো-চেয়ারম্যান অথবা আবার মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা হতে পারে। এরশাদ ছোট ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান করেন ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি। এ ঘোষণা দেওয়ার পর বেঁকে বসেন রওশন।

গৃহবিবাদ ঠেকাতে স্ত্রীকে এক ধাপ ওপরে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করেন। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে এরশাদ তার অবর্তমানে জি এম কাদের দল চালাবেন বলে নির্দেশনা দেন। কিন্তু জি এম কাদের দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি। বড় ভাই দলের চেয়ারম্যান এই তাঁর পুঁজি। এর মধ্যে সিন্ডিকেট নেতাদের সঙ্গেও তার দূরত্ব ঘোচেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘এইচ এম এরশাদ তার ভাইকে সরিয়ে স্ত্রীকে দলে মূল্যায়ন করেছেন। মনে করি, এটা পারিবারিক বিষয়। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর