এক সপ্তাহেও বিভাগীয় মামলা হয়নি কুমিল্লার সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে

নিজ প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর ৭ দিন পরও এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে কর্মরত। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকসহ অন্য শিক্ষকদের মধ্যেও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মোক্তল হোসেন গত বুধবার (১৫ মার্চ) দুই দফায় নিজ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষের সময় দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে মোক্তল হোসেনকে মুক্ত করে থানায় আনা হয়।

শ্লীলতাহানির ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোক্তল হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন মোক্তল হোসেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দেবীদ্বার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুক্তার আহমেদ বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০–২০০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। এ মামলায় সোমবার পর্যন্ত আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

দেবীদ্বার থানা পুলিশ জানান, ছাত্রীকে যৌনহয়রানীর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক অভিভাবকরা জানান, নিজ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে সরকার দলের এক প্রভাবশালী নেতার প্রভাবে হরহামেশা এরকম অনৈতিক কাজ করেন প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেন।

এর আগে গত ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের দুলারামপুর–সংলগ্ন ইসলামাবাদ গ্রামের জুনাব আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোক্তল হোসেন। ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সাত বছর আগে বিদ্যালয়টির এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে মোক্তল হোসেনের বিরুদ্ধে। তখন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে। সে সময় তাকে গ্রেফতার না হয়েও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভাগীয় মামলায় পরে উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

এরপর মোক্তল হোসেন দেবীদ্বার উপজেলার ভারুল উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তিন বছর আগে রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়োগ পান মাশিকাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে।

তবে এবারের ঘটনায় বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে ভূক্তভোগী পরিবারের দায়ের করা মামলায় জেল হাজতে গেলেও  তার বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে মোক্তল হোসেন এক বছর আগে দেবীদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন। সমিতির একাধিক সূত্র জানায়, সমিতির নেতারাও এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি।

দেবীদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও দেবীদ্বার মফিজউদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে আমরা তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারি না।’

তবে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. বাহালুল জানান, মোকতল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে তাই তার বিরুদ্ধে আমাদের কোন ব্যবস্থা নিতে হবেনা।

এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. জামাল নাছের জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে তিনি দেখবেন।

দেবীদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণধর জান তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এদিকে সোমবার সকাল ১১ টায় মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে ওই সমাবেশ করা হয়। ঘটনার ৭দিন অতিক্রম হলেও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনকে বহিস্কার বা কোন তদন্ত কমিটি গঠন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শান্তি সমাবেশে আগত এলাকাবাসী। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশে কেউ উপস্থিত না হওয়ায় হতাশ হন এলাকাবাসী। কারণ বাজারের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ও নিরীহ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার না করার আশ্বাস পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়ার আশা করেছিল এলাকাবাসী।

মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. বাহারুল হকের সভাপতিত্বে ওই শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক, আমরা মুক্তিযুদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও গুনাইঘর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির। এ সময় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক আব্দুল কাইয়ুম মূন্সী বাদল, এডভোকেট মো. সেলিম, গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, মো. এমরান হোসেন প্রমুখ।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর