মিঠাপুকুরে বাবার বাড়িতে মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যু, ঘরজামাই পলাতক

রংপুরের মিঠাপুকুরে ইউপি-সদস্য বাবার বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো রহস্যজনক মেয়ের মরদেহ। মিশরাত জাহান মিম (১৮) নামে এক সন্তানের জননী ঐ গৃহবধূকে তার বাবার বাড়ীতে নির্মম ভাবে হত্যার পর লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে গেছে মোঃ সাজ্জাদ পারভেজ (২৫) নামে ঐ ঘরজামাই। এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলের বিবরণে জানা যায়, তিন বছর আগে উপজেলার হযরতপুর গ্রামের আব্দুস সালাম মুন্সির ছেলে সাজ্জাদ পারভেজের সাথে একই উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের হামিদপুর আকন্দ পাড়ার স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহসীন মোঃ হাফিজ বাহাদুরের একমাত্র কন্যা মিশরাত জাহান মিমের পারিবারিক ভাবে বিবাহ সম্পূর্ন হয়।

নিহত মিমের স্বজন এবং স্হানীয়দের ভাষ্যমতে বিবাহের পর সাজ্জাদ তার স্ত্রী মিমকে রেখে একাধিক নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একমাত্র মেয়ে মিমের সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা নিজ বাড়ীতে মেয়েকে নিয়ে আসেন এবং একটি একতলা বিশিষ্ট বাড়ি তৈরি করে মেয়ে জামাই এবং নাতিকে থাকতে দেন। সেই সাথে মেয়ে মিমকে প্রায় ৪ বিঘা জমিও লিখে দেন। তবুও সাজ্জাদ অসন্তুষ্ট ছিলো।

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকালে জামাই তার শ্বশুর বাহাদুরকে কৌশলে চায়ের সাথে কোনকিছু খাওয়ালে তার শ্বশুর (বাহাদুর) কিছুক্ষণ পরেই অচেতন হয়ে পড়েন। পার্শ্বের বাড়িতে অবস্থানরত বাহাদুরের ছোট ভাই তারিফুল ইসলাম ভাই বাহাদুরের অবস্থা খারাপ দেখে মাইক্রোবাস যোগে জামাই সাজ্জাদ এবং তার ভাবীকে নিয়ে সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাহাদুরকে ভর্তি করান।

বাহাদুর রাত আনুমানিক-২ টার সময় সুস্থ্যতা অনুভব করলে, ফিরতি মাইক্রোবাস যোগে তারিফুল বাড়িতে আসার জন্য মনস্থির করেন। কিন্তুু সাজ্জাদ কৌশলে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে হাসপাতালে রেখে সেই মাইক্রোবাসেই চাচা শ্বশুর তারিফুলের সাথে রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে বাসায় চলে আসেন। এখানে এসে সে মিমের পাশে শয়নরত তার সৎ দাদী শ্বাশুড়ি সালেহা খাতুনকে তার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মিমকে নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে দেন।

রবিবার (১৯ মার্চ) সকাল আনুমানিক ৮ টার সময় তাদের শিশুপুত্র মাহির (২) রুমের ভিতরে চিৎকার করে কাঁদাকাটি করলে প্রতিবেশীরা দরজার ফাঁক দিয়ে মিমের ঝুলন্ত লাশ দেখে মিঠাপুকুর থানা পুলিশকে খবর দিলে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল রির্পোট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মিমের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মিমের মা সোহাগি বেগম এবং বাহাদুর একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন, তাদের দাবি, জামাই সাজ্জাদ পরকীয়া সম্পর্কের কারনে তাদের মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে পালিয়েছে।

ঐ ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ সদস্য মোঃ আকমল হোসেন জানান, ঘরজামাই সাজ্জাদের সঙ্গে মিমের পরিবার এবং তাদের ভালো সম্পর্ক ছিলো। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, মিমের নিজ গ্রামে এক ছেলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো। তবে তাদের দাবি, উভয়ের পরকীয়া অথবা সন্দেহ থেকেই এই মৃত্যুর সূত্রপাত।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বার্তাবাজারকে জানান, এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত সাজ্জাদ পারভেজ পলাতক থাকায় তার এবং পরিবারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা অবধি, নিহত মিমের লাশ আসার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর