বোরোতে তিন হাজার ৩শ’ কোটি টাকার চাল উৎপাদনের স্বপ্ন

কৃষিনির্ভর জেলা নেত্রকোণা। তারমধ্যে হাওরাঞ্চল ধান উদ্বৃত্ত। কিন্তু প্রতি বছর পানি সরে যেতে দেরি হওয়ায় ধানের চারা রোপণে বিলম্ব হয়। অপরদিকে ধান পাকতে পাকতে আগাম বন্যায় তলিয়ে যায়। তবু হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল এই বোরো ধান।

নিজেদের সর্বস্ব দিয়েই প্রতিবারের ন্যায় এবারও কৃষকরা আবাদে মাঠে নেমেছেন। জেলার হাওর বিস্তৃত উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরিতে এরমধ্যেই শেষ হয়েছে বোরো ধান রোপণের সব কাজ। কৃষকরা এখন জমিতে সেচ আর বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাওরের বিস্তৃত ফসলের জমিতে এখন শুধু সবুজের সমারোহ।

হাওর পাড়ের কৃষক চান্দু মিয়া। আশপাশের সব জমিতে বোরো ধান রোপণ শেষ হলেও সর্বশেষ তার ১৫ শতাংশ জমিতে নিজেই রোপণ করছেন ধানের চারা। শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় পরপর তিনটি জমিতে একাই ধানের চারা রোপণ করেছেন। হাওরের জমিগুলোতে ধান চাষে এখন পর্যন্ত তার ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো, সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় একশত মণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন তিনি। যা বাজারে বিক্রি করে তার আয় হবে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মতো।

চান্দু মিয়ার মতো হাজারো কৃষক বোরো মৌসুমের এই ফসলেই সারা বছরের খোরাক মেটান। বছরের ছয় মাস ধান উৎপাদনের ফসলে আর বাকি ৬ মাস হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন হাওরের হাজারো পরিবার। তবে ধান চাষে ব্যয় ফসলের বিক্রয় মূল্যের তারতম্য থাকায় অনেক সময় ধান চাষ থেকে ছিটকে পড়েন কৃষকরা। ফলে খরচের খাতা বড় হয়। কৃষকের ক্রয় ক্ষমতায় রাখতে তারা সরকারের প্রতি দাবি জানান।

এদিকে গত বছরের আগাম বন্যার কারণে এ বছর হাওরে স্বল্প মেয়াদী ধানের জাত রোপনের ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বি ধান ২৮ জাতের ধানের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেশি। বাকি ৭ উপজেলায় বোরো আবাদ চলছে পুরোদমে। বিশেষ করে জেলার সীমান্তবর্তী ২ উপজেলাসহ উঁচু জমিগুলোতে এখনো ধানের চারা রোপণের কাজ চলছে। জেলাজুড়ে বোরো ধান রোপণের কাজ এখন পর্যন্ত ৭৫ শেষ হয়েছে।

এ বছর জেলাজুড়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাঝে শুধু হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার ৯শ হেক্টরের জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগাম বন্যাসহ এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলাজুড়ে চালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৫ মেট্রিকটন। সরকার নির্ধারিত প্রতি টন চালের দাম ৪২ হাজার টাকা দরে তিন হাজার তিনশত কোটি টাকার চাল উৎপাদন হতে পারে। যা থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি করা যাবে।

কৃষকরা বলছেন, এবার বোরো ধানের আবাদকে ঘিরে জমিগুলো আগে থেকে তৈরি করছেন কৃষকরা। গত বছরের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই বছর ভালো ফলন ঘরে তোলার আশা দেখছেন। তবে সময় মতো সার আর সেচের ব্যবস্থা না থাকলে ফলন ভালো হবে না বলে শঙ্কায় কৃষকরা। যদিও সারের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তারা আরো বলছেন, হাওর ও উঁচু জমিগুলোতে সেচের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষকরা সময় মতো সব কিছু তাদের হাতের কাছে পাবেন বলে আশ্বাস কৃষি বিভাগের।

নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, এ বছর হাওরে সময়ের আগেই কৃষকরা বোরো আবাদ শুরু করেছেন। এরমধ্যে হাওরে বোরো আবাদ শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। আর পুরো জেলায় ৭৫ ভাগ ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জেলার হাওরঘেরা যে উপজেলাগুলো রয়েছে সেখানে যেন আগাম বন্যার কারণে বোরো ফসলের কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য স্বল্প-জীবনকালীন ধানের জাত রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর মাঝে বি-খান ২৮ একটি জাত। এছাড়াও কৃষকপর্যায়ে নানা উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। যেন কৃষকরা ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারেন। তারপরেও কোথাও কোনো অসংঙ্গতি পাওয়া যায় তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর