প্রভাবশালীদের আতঙ্কে ঘরছাড়া পরিবার; প্রধানমন্ত্রীর কাছে চান বিচার

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় প্রভাবশালীদের আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়েছে ছগির হাওলাদারের পরিবার। ছগির উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের মধ্য কলারণ ৯নং ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা।

জানা যায়, মোঃ ছগির হাওলাদার এর স্ত্রী সুমি বেগম (৩৭) এর ওপর (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ধর্ষন চেষ্টা চালিয়েছে রতন তালুকদার (৩৫) নামের এক প্রতিবেশী। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় দলবল নিয়ে ছগির ও তার পরিবারের ওপর হামলা চালায় রতন এর স্বজনেরা।

ভুক্তভোগী সুমি বেগম বলেন, আমি ঘরের ভিতরে ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। এসময় রতন ঘরে উঠে আমাকে ঝাপটে ধরে। আমি বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে রতন বলে ‘তোকে আজকে শেষ করবো, খেয়ে ফেলবো’ এসময় আমার ছোটো মেয়ে এসে চিতকার দিলে তাকে আঘাত করে। ডাক চিতকার শুনে আমার স্বামী ছগির এসে রতনকে আটকে রাখে। রতনকে আটকে রাখার খবর পেয়ে তার স্বজনেরা তাকে নিয়ে যায়। এবং পরে তার ভাই মোস্তাক ভাড়াটে লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়।

এ ঘটনায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে থানা পুলিশের সাহায্য চায় ছগির হাওলাদার এর বড় মেয়ে স্কুল শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার (১৫)। পরে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ আহত ছগির ও তার পরিবারকে চিকিৎসার জন্য পিরোজপুর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ এনামুল হক মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছগির ও তার স্ত্রী সুমি বেগম। পরবর্তীতে পিরোজপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে ৭জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন সুমি বেগম।

এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ছগির হাওলাদার ও রতন তালুকদারের পরিবারের মাঝে পূর্ব থেকেই জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এবং রতন তালুকদার বিভিন্ন সময় ছগির এর স্ত্রীর উপর কু-দৃষ্টি দিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুব আলী জোমাদ্দার বলেন, পূর্বে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি শালিশ হয়েছিলো। সেই শালিশে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো রতন কখনো ছগিরের বাড়ির দিকে যাতায়াত করবে না। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে তাদের বাড়িতে যাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। স্ত্রী’কে ধর্ষণ করার চেষ্টা করায় রতন তালুকদারকে ঘরের ভিতরে আটকে রেখে মারধর করেছে ছগির এমন তথ্যও দিয়েছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী পল্লী চিকিৎসক লুৎফর রহমান বলেন, এ ঘটনা শুনে আমি গিয়ে ছগির এর ঘর থেকে কিছুটা আহত অবস্থায় রতনকে বের করি। রতনকে উদ্ধারের পর রতনের ভাইয়েরা অন্যান্য লোকজন নিয়ে ছগির এর বাড়ি ঘরে হামলা চালায় শুনেছি।

এ ঘটনায় ছগির ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে রতন এর ভাই মোড়লগঞ্জ থানা ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাক বিল্লাহ (৩৩) ইন্দুরকানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি জানান, তার ভাই স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না এবং প্রতিবন্ধী কোটায় ৩৫নং পশ্চিম কলারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমএলএসএস পদে চাকুরী করেন। তাকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মারধর করেছে ছগির ও তার পরিবার।

ছগিরের বসত ঘরে হামলার বিষয়ে মোস্তাক বলেন, ছগিরের চাচা-চাচীরা মিলে নিজেরা ঘরে ভাংচুর করেছে। এ বিষয়ে ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ঘটনার পর থেকে হামলার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ছগিরের পরিবার। প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগী এ অসহায় পরিবারটি।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর