তেঁতুলিয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো সৌন্দর্য ও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে টিউলিপ

নেদারল্যান্ড, কাশ্মীর, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক নয় সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামে দ্বিতীয় বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল উৎপাদিত হচ্ছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ) এবং ইণ্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট (ইফাদ)”র সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) দেশের উত্তরাঞ্চলে টিউলিপ ফুল চাষ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়।

এই প্রকল্পের আওতায় তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন কৃষাণী চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক জনাব ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, পরিচালক (প্রশাসন) জনাব ড. সেলিমা আখতার, টিউলিপ ফুলের বাল্ব (বীজ) রোপণ করা উদ্বোধন করেন। ইএসডিও’র এই প্রকল্পের আওতায় চাষীরা এখানে ১০টি প্রজাতির ১০ কালারের টিউলিপ চাষ করেছেন।

এর মধ্যে অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), ষ্টংগোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল ছায়া) এবং গোল্ডেন টিকিট (হলুদ) প্রজাতির টিউলিপ ফুলে ভরে গেছে কৃষাণীদের বাগান। প্রতিদিনই নতুন নতুন ফুল ফুটছে বাগান গুলোতে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে সকল কলি ফুলে পরিণত হবে। মাত্র ১৬ দিনের পরিচর্যায় ফুলের কলি আসে। ২০-২১ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। ডাটায় কিছু পাতা থাকে। টিউলিপ ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফুল চাষ সহনশীল।

এই ফুলের বাল্ব বা বীজ রোপণের দিন হতে ১৮-২০ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ২৫- ৬০ দিন পর্যন্ত এই ফুল স্থায়ী থাকে। ইএসডিও চাষীদেরকে এই ফুল চাষাবাদের জন্য নেদারল্যান্ড থেকে টিউলিপ ফুলের প্রতিটি বাল্ব বা বীজ ৫৫ টাকা কিনে চাষীদের মাঝে বিতরণ করেছে। বাল্বের পাশাপাশি ইএসডিও চাষীদেরকে প্রকল্প হতে বিনামুল্যে রাসায়নিক স্যার, জৈব সার, খৈল, শেডনেট এবং ফেন্সিংনেট (বেড়ার জাল) দেয়া হয়েছে।

এছাড়া চাষীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুল চাষাবাদে উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। চাষীদের পরিবারে আয় বাড়ানো ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, বিদেশ থেকে টিউলিপ ফুল আমদানি নির্ভরতা কমানো, পঞ্চগড় জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত মানের টিউলিপ ফুল উৎপাদনে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে চাষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই ইএসডিও’র এই প্রকল্পের লক্ষ্য। বানিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন করে তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রিতে ঢাকার ফুল ব্যবসায়ীদের সাথে চাষীদের সমন্বয় করা বা নেগোসিয়েশনের ব্যবস্থা করে উৎপাদিত ফুল বাজারজাত করণে সহযোগিতা করছে ইএসডিও।

টিউলিপ চাষাবাদে বাল্ব বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য বাবদ মোট খরচ প্রায় ৭৮- থেকে ৮০ লাখ টাকা। ১ লক্ষ টিউলিপ ফুল বিক্রি করতে পারলে ২০০ শতক জমি থেকে মাত্র দুই মাসে কৃষাণীরা উল্লেখযোগ্য আয়ের স্বপ্ন দেখছে। পরবর্তীতে বছরের অন্য সময়টাতে দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফুল চাষাবাদর করতে পারবেন। চাষীরা তাদের ২০০ শতাংশ জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো রাজসিক সৌন্দর্য্যরে ফুল টিউলিপ উৎপাদন করে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছেন। তেঁতুলিয়া উপজেলার এই নারী চাষীরা এবছর টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ৫০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করেছেন তারা। ফুল বাগানে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটক ও ফুল প্রেমিদের জন্য প্রবেশ মূল্য চালু করেছেন। এতে করে ফুল বিক্রি বাদেও তারা অতিরিক্ত টাকা আয় করতে পারবেন। প্রকল্পটি যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয় তাহলে ভবিষ্যতে অধিক সংখ্যক চাষীকে বানিজ্যিক ভাবে টিউলিপ ফুল চাষাবাদে অর্ন্তভুক্ত করা হবে। বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ স¤প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা পাবে। এর ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি খাতে যুক্ত হতে পারে টিউলিপ। উত্তরের শান্ত নিরিবিলি সবুজ শ্যামলিমা পর্যটন এলাকা পঞ্চগড় জেলায় টিউলিপ ফুলের বাগান সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনের আকর্ষণ ও বেড়েছে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্তের লোকজন নানান প্রজাতি ও নানা রংঙ্গের বাহারি টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন।

দেশে এই ফুলের চাহিদা থাকায় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। উচ্চম‚ল্যে আমদানির মাধ্যমে এ ফুলের চাহিদা প‚রণ করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যা, প্রযুক্তি ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষীরা এবারেও সফলতা পেয়েছেন। যেহেতু পরীক্ষামূলকভাবে গতবছরেও তারা সফল হয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে এখানে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ করা হচ্ছে। ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বিশ্বাস করেন টিউলিপ ফুল চাষের মাধ্যমে আগামী দিনগুলোতে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র চাষীদের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক আয় এবং সম্ভাবনা যেমন অনেকাংশে বেড়ে যাবে একিভাবে পর্যটন শিল্পেও তেঁতুলিয়ার যে বিদ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে যে একটি আধার সেটি আরও সম্প্রসারিত হবে এবং এটি এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

ভবিষ্যতে টিউলিপ চাষ আরও বড় আকারে সম্প্রসারিত করার ইচ্ছা রয়েছে। এছাড়া ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার বিষয়েও বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যেমন পর্যটকদের পয়:নিস্কাশন সুবিধা, আবাসন সুবিধা, দেশীয় স্বাদে তেতুলিয়ার খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রকল্প এলাকায়।

এ বিষয়ে ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) পরিচালক ড. সেলিমা আখতার জানান, বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুল চাষ হচ্ছে। কি চমৎকার টিউলিপ বাহিরি ধরণের ফুল চাষ ফুটেছে। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হলে আগামী বড় পরিসরে চাষাবাদ করা হবে।

ইএসডিও মনে করে পৃষ্ট পোষকতা এবং সঠিক সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের সোনার মাটিতে সোনার ফসল ফলাতে সক্ষম আমাদের কৃষান কৃষাণীরা। প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনাদের সহযোগিতা পেলে মাননীয় প্রধান মন্ত্রির স্মাট বাংলাদেশ তৈরীর স্বপ্ন পুরণে অনেক ভুমিকা রাখবে আমাদের দেশের কৃষাণ কৃষানীরা।

বার্তাবাজার/জে আই

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর