‘জলাতঙ্কে ভয় নয়, সচেতনতা ও ভ্যাক্সিনে হবে জয়’

জলাতঙ্ক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি। এ রোগের মৃত্যুর হার শতভাগ। জলাতঙ্গ রোগ মুলত কুকুরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়া বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় ও আঁচড় থেকে হতে পারে। বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজারের বেশি মানুষ জলাতঙ্কে মারা যেত এবং গবাদী পশুর মৃত্যুর সংখ্যা অগনিত ছিল। ২০১১ সাল থেকে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে এটি ২০১৬ সালে ৯০% এর নিচে নামিয়ে আনে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্ক মুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন সরকার। যার মধ্যে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম অন্যতম।

এই লক্ষে দেবহাটায় কুকুর ও বিড়ালের ভ্যাক্সিন কার্যক্রম আগামী বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৪ তারিখ পর্যন্ত। এই বিশেষ কর্মসূচিতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় এক্সপার্টদের একাধীক টিম কুকুর ও বিড়ালের খুঁজে বের করে প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন প্রদান করবেন। এই কর্মসূচি বাস্তাবায়নে তৃর্ণমূলের সকলের সহযোগী প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি একযোগে কাজ করবে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে অবহিতকরণ সভায় এসব কথা জানানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে উক্ত অবহিতকরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল লতিফ। বক্তব্যদেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ বিপ্লব মন্ডল, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ তহিদুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহজাহান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (এমডিভি) কার্যক্রমের ফিল্ড সুপারভাইজার কাওসার আহমেদ।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর খায়রুল আলম, সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (এমডিভি) কার্যক্রমের ফিল্ড সুপারভাইজার জনকল্যাণ চক্রবর্তী সহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।

বক্তারা বলেন, জলাতঙ্ক একটি তীব্র ভাইরাল সংক্রমণ যা প্রায় সবসময়ই মারাত্মক। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, বানরের মাধ্যমে সংক্রমন হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে বাদুড় থেকে এই ভাইরাস অন্যপ্রাণি বহন করে সব শেষে মানুষে দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত মানুষের মাধ্যমে অন্য মানুষ সংক্রমনিত হয় না। এ জন্য বেশি বেশি সচেতনতা দরকার। এমনকি আক্রান্ত প্রাণি থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করার আগে প্রতিরোধ করা গেলে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। যেহেতু প্রাণীর লালার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। বিপথগামী কুকুরগুলি সংক্রমণের সবচেয়ে সম্ভাব্য উৎস, সে কারণে পোষা প্রাণীদের টিকা দেওয়া হয়। যদি একটি উন্মত্ত প্রাণী একজন ব্যক্তির উপর একটি খোলা ক্ষত চাটতে পারে, তাহলে ভাইরাসটি সহজে সংক্রমণ হতে পারে। মাথা এবং ঘাড়ের ক্ষতগুলি আরও বিপজ্জনক কারণ সংক্রমণ দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। জলাতঙ্কের উপসর্গ এবং লক্ষণগুলি রোগের শেষ পর্যায়ে দেখা যায় না, এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে এনসেফালাইটিস সৃষ্টি করে এবং এর পরেই মৃত্যু ঘটে। প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল: মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, জ্বর এবং কামড়ের জায়গায় খিঁচুনি। অত্যধিক লালা নিঃসরণ, গিলতে অসুবিধা, গিলতে অসুবিধার কারণে পানির ভয়, উদ্বেগ, বিভ্রান্তি, অনিদ্রা এমনকি আংশিক পক্ষাঘাত এবং কখনও কখনও কোমার মতো লক্ষণগুলি জলাতঙ্কের ইঙ্গিত দেয়। ব্যক্তি শব্দ, আলো এবং এমনকি বাতাসের ভয় দেখা যায়।

বক্তারা আরো বলেন, জলাতঙ্ক ৩টি স্থরের ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রথমত যদি কোন মানুষকে কুকুর, বিড়াল বা শিয়ালে কামড়ে বা আঁচড় বা জিহ্বা দিয়ে কোন স্থানে চাটতে পারে তাহলে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের না হয় সেক্ষেত্রে ওই স্থানে সাবান পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার জাতীয় জিনিস দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট ধরে ধুতে ফেলতে হবে। ২য় স্থরে যদি কোন ব্যক্তিকে কামড় দেয় সেই স্থান থেকে রক্ত নিগত হতে থাকে তাহলে ক্ষত স্থান চেপে ধরে রাখতে হবে এবং সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এমনকি ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে কিংবা রেজিস্টার্ড ডাক্তারের নিকট হতে ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে হবে। ৩য় স্থরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি একাধিক স্থানে কামড়িয়ে জখম করে থাকে সেক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সেখানে ডাক্তারের বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে জলাতঙ্ক সাথে সাথে ছড়িয়ে না পড়লেও এটি ১০/১৫ বছর পরেও লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই ঝাঁড় ফুক না দিয়ে রুগিকে সরাসরি চিকিৎসকের নিকট নিয়ে এসে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনতে হবে। মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা যায় তাহলে দেশ থেকে জলাতঙ্ক কমে যাবে। সে জন্য বিপথগামী কুকুর, পোষা প্রাণীদের টিকার আওতায় আনতে হবে। এজন্য এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর