১ স্বাক্ষরে দিতে লাখ টাকা ঘুস!

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের ঘুস বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঠিকাদার। কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে উৎকোচ নেন প্রকৌশলী আশিকুর। এমনকি কাজের শেষে বিলে স্বাক্ষর করাতেও দিতে হয় লাখ টাকা ঘুস।

অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকৌশলী মির্জাগঞ্জে যোগদানের পর থেকে বছর না যেতেই বিভিন্ন কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে এ যাবত অর্ধ-কোটি টাকার উপরে ঘুস বাণিজ্য করেছেন। এছাড়াও ঠিকাদার ঘুস দিতে না চাইলে তাকে কাজের শেয়ারে রাখার প্রস্তাবও দেন ওই প্রকৌশলী।

আবার কখনো কাজ শেষে হিসাব করে নিজেই যদি ঠিকাদারের লাভ হয় তবে কাজের লভ্যাংশ চেয়ে বসেন প্রকৌশলী আশিকুর।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী আশিকুর রহমান।

সূত্র জানায়, গত ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন আশিকুর রহমান। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন কাজে ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে অতিষ্ঠ করে তোলেন ঠিকাদারদের।

এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, ওই প্রকৌশলী আশিকুর ঘুস ছাড়া কোনো কাজই করেন না। যত ধরনের নির্মাণ কাজ আছে সব কাজ থেকে শতকরা হারের পাশাপাশি নানা অনিয়মরে আশ্রয় নিয়েও ঘুস গ্রহণ করে আসছেন।

ঠিকাদারদের দেওয়া তথ্যমতে, যোগদানের পর থেকে এই এক বছরে তার ঘুস বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে। প্রতিটি বিলের অনুকূলে তাকে দিতে হয় ঘুসের টাকা। একপ্রকার বলতে গেলে মির্জাগঞ্জ এলজিইডি অফিস আশিকুরের ছত্রছায়ায় এখন ঘুসের হাটে পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মির্জাগঞ্জ উপজেলার একাধিক ঠিকাদার জানান, বর্তমানে আমরা এলজিইডির কাজে লাভ ও কাজের মানের আগে হিসাব করি এলজিইডি অফিসে প্রকৌশলীকে কত টাকা ঘুস দিতে হবে। আমরা ঘুসের হাটে ঠিকাদারি করে এখন অতিষ্ঠ।

এক ঠিকাদার জানান, বর্তমানে আমার ১৬টি সাইটে (প্রকল্পের আওতায়) কাজ চলে; এতে প্রায় বিল হবে ১৫ কোটি টাকার উপরে, এর মধ্যে যে পরিমাণ টাকার বিল উত্তোলন করেছি, তাতে প্রকৌশলীকেই ৬ লাখ টাকার মতো ঘুস দিতে হয়েছে।

আরেক ঠিকাদার জানান, একপ্রকার বাধ্য হয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাজ ছেড়ে দিয়েছি। কিছুদিন আগে একটি কাজের সমাপ্তি হওয়ায় হস্তান্তরকালে প্রকৌশলী আশিকুর নানা ত্রুটি দেখিয়ে আমার কাছে ২ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে দেড় লাখ টাকা ঘুস দিয়ে বিল উত্তোলন করতে হয়েছে। এমন যদি প্রতিটি কাজে ঘুস দিতে হয় তবে কাজ করে লাভ করব কী! এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতদিন প্রকৌশলী আশিকুর মির্জাগঞ্জে আছেন ততদিন আর কাজ করব না।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন ঠিকাদার ওই প্রকৌশলীকে দেওয়া তাদের ঘুসের কথা বলেন। তিনি যোগদানের পর এই এক বছরে ঘুসের পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকার ওপরে হবে বলে তারা জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, অভিযোগ দিলেই তো হবে না, প্রমাণ আছে কিনা সেটি বিষয়। আমার একটা সামাজিক অবস্থান আছে এটি নষ্ট করার জন্যই এমন অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর