ফ্ল্যাট থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মা-মেয়েসহ তিনজনকে উদ্ধার

রাজধানীর উত্তরার একটি বদ্ধ ফ্ল্যাট থেকে মা-মেয়েসহ তিনজনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ভিকটিমদেরকে অচেতন (মুমূর্ষু) অবস্থায় উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরস্থ ১৩নং রোডের ২৮ নং বাড়ির ২য় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদেরকে উত্তরার কুয়েত মেত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উদ্ধারকৃতরা হলেন- শাফানা আফিফা শ্যামী (৩৫) ও তার জমজ দুই মেয়ে আয়েশা (১০) ও ফাতেমা (১০)। তারা সকলেই ওই ফ্ল্যাটটির স্থায়ী বাসিন্দা।

জানা যায়, পারিবারিক অভিমানকে কেন্দ্র করে শাফানা আফিফা শ্যামী নামের ওই জননী গত কয়েকদিন যাবৎ দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নিজেকে ফ্ল্যাটের ভেতর আবদ্ধ করে রাখে। এতে করে রান্নাবান্না ও খাওয়া-দাওয়া না করায় (অনাহারে) তারা সকলেই ফ্ল্যাটের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি বুঝতে পেরে বাড়ির প্রতিবেশিরা পুলিশকে খবর দিলে ভোরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। এসময় ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে মুমূর্ষূ (অচেতন) অবস্থায় মা-মেয়েসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফ্ল্যাটের ভেতর ভিকটিমরা মুমুর্ষূ অবস্থায় ছিল। অনাহারে থাকতে থাকতে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। ভিকটিমদের উদ্ধার করে আমরা তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তাদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভবন কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধি জানায়, শাফানা আফিফা শ্যামী নামের ওই নারী পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে ওই ফ্ল্যাটটির মালিক হন এবং দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটটিতে বসবাস করে আসছেন। ভাইদের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তার মতবিরোধ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে আর্থিকভাবে সমস্যাগ্রস্থ হন তিনি। নিজ ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি বিলসহ কয়েক মাসের সার্ভিস চার্জ পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি।

এদিকে, ওই নারীর স্বজনদের দাবি, আফিফা মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আফিফা স্বজনদের কারো কথা না শুনায় স্বজনদের কেউই তার সাথে যোগাযোগ করতো না। এসব বিষয়ে তারকিন আহমেদ নামের ভিকটিমের আপন ভাই সাংবাদিকদের জানান, সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। কোন মানুষকেই ও বিশ্বাস করতে পারে না। শুনেছি ও অসুস্থ হয়েছে। ঢাকার বাইরে আমার কাজ থাকায় আমি দেখতে যেতে পারিনি। তবে আমার অন্য ভাইদেরকে বিষয়টি জানিয়েছি।

বিকেলে উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ৪র্থ তলার একটি ওয়ার্ডে দুই কন্যা সন্তানসহ ওই নারীর চিকিৎসা চলছে। আয়েশা ও ফাতেমা নামের তার দুই অবুঝ সন্তান ক্ষুধার জ্বালায় কান্নাকাটি করছে। কথা বলতে চাইলে ওই নারী শুধুই কান্না করছে। স্বজনদের কেউই এখন পর্যন্ত তাকে দেখতে আসেননি।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর