নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে ইটভাটা, নেই প্রশাসনের নজরদারি

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় সাতটি ইটভাটার অনুমতি থাকলেও ইটভাটা চলছে ২০টি। এসব ইটভাটায় কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই চলছে।জ্বালানির পরিবর্তনে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে ভাটায় কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, উপজেলা মোট ইটভাটার সংখ্যা ২০ টি। এরমধ্যে মাত্র ৭ টির লাইসেন্স রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ভাটার সংখ্যা আরও বেশি রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইট ভাটার নয়ানগর ইউনিয়নে ও মেলান্দহ পৌরসভায়।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটা ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, ফসলি জমি ও সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে ভাটা। ইটভাটায় শত শত মণ গাছের কাঠ রেখে পোড়ানো হচ্ছে।‌ কাঠ পোড়ানোয় ইটভাটা থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ভাটার আশেপাশ বসত বাড়ি লালচি রং ধারণ করেছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৩-এ বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা নির্মাণ, ইট প্রস্তুতে কৃষি জমি বা পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া খাল, পুকুর, নদীরপাড় বা চরাঞ্চল কেটে মাটি সংগ্রহ করা যাবে না।এলজিইডির সড়ক ইট ও মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনও ধরনের কাঠ পোড়ানো যাবে না। মানসম্পন্ন কয়লা পোড়াতে হবে।

অথচ নিয়মনীতি উপেক্ষা করেই কৃষি জমি ও এলজিইডির সড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ভাটাগুলো। ভাটায় পরিবেশবান্ধব চুল্লি নেই। এসব ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। ফসলি জমির ওপরের স্তর থেকে মাটি তোলায় জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়াসহ উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

উপজেলার পৌরসভার ফুলছেন্না এলাকার মো. নাজমুল নামে এক বলেন, ‘ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইট ভাটার ধোঁয়া থাকতে পারি না। ইট পোড়ানোর সময় কালো ধোঁয়ায় জন্য নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট হয়। ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যায় না। প্রতিবাদ করলে তাঁরা আমাদের নানা ধরনের হুমকি দেন।’

নয়ানগর ইউনিয়নের বরুঙ্গা এলাকার কৃষক কাদের শেখ বলেন, ইটভাটার কারণে ফসল ভালো হয় না। ইটভাটার আশপাশে যে জমিগুলো যেখানে ধান হওয়ার কথা ৩০ মণ। সেখানে ধান হয় ১৫ মণ।

উপজেলার শিহাটা এলাকার এম এম ব্রিকসের মালিক হুসেন আলী বলেন, ‘ইটভাটা চালাতে অনেক জায়গায় টাকা দিতে হয়। ব্যবসাতে আগের মতো লাভ নেই, কয়লার দাম বেশি তাই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কয়লাও পোড়ানো হয় মাঝে মধ্য।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জামালপুর জেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, অবৈধ ইটের ভাটা, কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। সব অবৈধ ইটের ভাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝঁকি নিশ্চিত হয়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধন, বিভিন্ন মিটিং ও সমাবেশে প্রতিবাদ করেছি। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম মিঞা বলেন, অচিরেই অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিয়মের বাইরে কোনো ইটভাটা চলতে দেওয়া যাবে না।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর