প্যানেল মেয়রের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, কল রেকর্ড ফাঁস

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ওই পৌরসভার এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (৭,৮ ও ৯ নং) আয়েশা সিদ্দিকাকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ভূক্তভোগী ওই নারী কাউন্সিলর বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে ঘোড়াঘাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছে।

এছাড়াও দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন ভূক্তভোগী নারী কাউন্সিলর।

মামলায় আসামী আব্দুল কাদের (৫৫) পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নুরজাহানপুর গ্রামের মৃত ওয়াকিল আহম্মেদের ছেলে। মামলার বাদী ওই নারী কাউন্সিলর আয়েশা সিদ্দিকা (৩৬) শ্যামপুর লালমাটি গ্রামের মৃত আবু বক্করের মেয়ে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, “অভিযুক্ত কাউন্সিলর আব্দুল কাদের দীর্ঘদিন থেকে ভূক্তভোগী ওই নারী কাউন্সিলর আয়েশাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে এবং বিভিন্ন সময় তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। গত ২১ জানুয়ারী দুপুরে অভিযুক্ত কাউন্সিলর তার বাড়িতে কেও না থাকায় মোবাইল ফোনে ওই নারী কাউন্সিলরকে তার নিজ বাড়িতে ডাকে। তবে ওই নারী কাউন্সিলর তার বাড়িতে না গিয়ে দাপ্তরিক কাজে পৌরসভা ভবনে যায় এবং মেয়র কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি কাউন্সিলরদেরকে কক্ষে গিয়ে একাই বসে থাকেন। একই দিন দুপুর আনুমানিক ৩টার সময় অভিযুক্ত কাউন্সিলর আব্দুল কাদের কাউন্সিলরদের কক্ষে অন্য কেও না থাকায় পিছন দিক থেকে ওই নারী কাউন্সিলরকে ঝাপটা দিয়ে ধরে।”

এদিকে অভিযুক্ত এবং মামলার বাদী এই দুই কাউন্সিলরের একটি কল
রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এখন ভাইরাল।

ফাঁস হওয়া ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডের ওই কল রেকর্ডে শোনা যায়, “অভিযুক্ত কাউন্সিলর ভূক্তভোগী ওই নারী কাউন্সিলরকে তার নিজ বাড়িতে আসার জন্য বলছে। তবে ওই নারী কাউন্সিলর শারীরিক সমস্যার কথা বলে তার বাড়িতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময়
অভিযুক্ত কাউন্সিলর তার জন্য বাড়িতে টাকা ও পান রেডি করে রাখা আছে বলে তাকে আশ্বস্ত করে। শেষ পর্যায়ে ওই নারী কাউন্সিলর অভিযুক্তের বাড়িতে যাবার বিষয়টি দেখছি বলে জানান। উভয়পক্ষ কথা মধ্যে তারা আরো নানা রকম যৌন হয়রারীমূলক ও অশালীন বাক্য ব্যবহার করে।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্যানেল মেয়র আব্দুর কাদের বলেন, ‘আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে গত ২১ জানুয়ারি আমি পৌরসভাতে গিয়ে ওই নারী কাউন্সিলরকে জড়িয়ে ধরেছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ওইদিন আমি পৌরসভাতেই যাইনি। পৌরসভায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আমার কথার সত্যতা প্রমাণিত হবে।’

এদিকে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই কল রেকর্ডটি এডিট করা। এখানে এডিট করে কিছু অশালীন কথা বসানো হয়েছে।’

এদিকে ভূক্তভোগী নারী কাউন্সিলর আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমি এজাহারে যে বিবরণ দিয়েছি তা সম্পূর্ণ সত্য। অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলর দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে আমাকে বিরক্ত করে আসছে। ইদানিং সে আমাকে বিভিন্ন খারাপ ম্যাসেজ দেয় এবং ফোন করে অশালীন কথাবার্তা বলে। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি চাই।’

ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আমাদের জন্য দুঃখজনক। এই সংক্রান্তে ভূক্তভোগী সংরক্ষিত ওই নারী কাউন্সিলর আমার কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোড়াঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, ‘ভূক্তভোগী ওই নারী জনপ্রতিনিধি যৌন হয়রানীর অভিযোগে একজনকে আসামী করে একটি মামলা করেছে। অভিযুক্ত অপর জনপ্রতিনিধিকে গ্রেফতার করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর