এলোমেলো ছড়াচ্ছে নিপাহ ভাইরাস, মৃত্যুর সংখ্যা ৫

এ বছর দেশের ছয় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে নিপাহ ভাইরাস। আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেছেন। গত সাত বছরের মধ্যে এ বছরই সর্বোচ্চ রোগী আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন শিশু থাকায় বাড়ছে ঝুঁকি। এলোমেলোভাবে রোগী শনাক্ত হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। এর মধ্যেই হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বছর রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা এই ছয় জেলায় নয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন পুরুষ, চারজন নারী এবং তিনজন শিশু রয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের ৭০ শতাংশ মারা যাওয়ায় ঝুঁকি অনেক বেশি।

রোগের উপসর্গের ব্যাপারে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘কাঁচা খেজুরের রস এবং বাদুড় খেয়েছে এমন ফল খাওয়া যাবে না। তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, খিঁচুনি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর নওগাঁয় দুজন এবং ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ১ জানুয়ারি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে একজন এবং ২ জানুয়ারি ও ১০ জানুয়ারি বালিয়াকান্দিতে দুজন আক্রান্ত হন। এরপর পাবনার ঈশ্বরদীতে একজন আক্রান্ত হন। ১২ জানুয়ারি শরীয়তপুরের নড়িয়ায় একজন এবং ১৯ জানুয়ারি ঢাকার রমনায় একজন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এই হার ৭১ শতাংশ। নিপাহ ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে এরই মধ্যে হাসপাতাল প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর ধরে বছরে ২-৩ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যেত। এ বছর তুলনামূলক রোগী বেশি। কিন্তু এবারের সমস্যা হলো বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত রোগী মিলছে। আগে সংক্রমণ ছড়ালে এক জায়গায় অনেক রোগী থাকত। একই খেজুরের রস খেয়ে অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এবার রোগীরা ছড়ানো ছিটানো। এটি একটি ঝুঁকির কারণ।

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক জেলায় ভাইরাস আক্রান্ত বাদুড় আছে। বিভিন্ন জেলায় মানুষ যদি বেশি খেজুরের রস খায় তাহলে বড় আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ বা এপ্রিল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। সে কারণে এখনো মৌসুম আছে। খেজুরের রস যতদিন থাকে ততদিন ঝুঁকি আছে’। আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, এর আগে ২০১৫ সালে দেশে নিপাহ ভাইরাসে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১ জন। তার পরের বছরগুলোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২-৮ জনের মধ্যে ওঠানামা করেছে। ২০০১ সালে মেহেরপুরে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত দেশের ৩২ জেলায় ৩৩৪ জন নিপাহ রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছেন ২৩৫ জন। মৃত্যু হার ৭১ শতাংশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো অবস্থাতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না। তবে খেজুরের রস সেদ্ধ করে বা গুড় বানিয়ে খাওয়া যাবে। খেজুরের রস ছাড়াও বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আমরা যেসব ফল বা সবজি না ছিলে খাই, যেমন- টমেটো, বরই, পেয়ারা, স্ট্রবেরি সেগুলো অবশ্যই সাবান দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। আর যেসব ফল ছিলে খাই, সেগুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। বাদুড় খেয়েছে এমন কোনো ফল খাওয়া যাবে না।’

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর