বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার ইতিকথা

ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি পেশ করেন।

৬ই ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে নিজেই ৬ই ফেব্রুয়ারি এর সম্মেলন বর্জন করেন। ১৯৬৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি সংগৃহীত হয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকা সংবলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করা হয়।

ছয় দফার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমরা পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করি, তবে আমাদের ন্যায্য দাবিও চাই, অন্যকে দিতেও চাই। কলোনি বা বাজার হিসেবে বাস করতে চাই না। নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার চাই।

ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে একটি ফেডারেল বা যৌথ রাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেশন বা যৌথ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া। পরবর্তী সময়ে এই ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়। পূর্ব বা পশ্চিম পাকিস্তান নয়, মূলত স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সোপান ছিল এই ছয় দফা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে সে সময় দাবি মানেই ছিল ঘোরতর অপরাধ। তাই ছয় দফাকে তারা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান আলাদা করার প্রচেষ্টা বলে উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। অত্যাচার করে বন্ধ করতে চেয়েছিল, দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল দাবি উত্থাপনকারী শেখ মুজিবুর রহমানকে। আসলে তাদের মূল লক্ষ্যই ছিল নিজ স্বার্থ।

একাত্তরে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ পায়। যদিও ৩০ লাখ শহিদের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশে বাঙালির স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল আরও অনেক আগেই। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা
আন্দোলন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি—সবই বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির একেকটি ধাপ।

পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিরা কখনো সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারেনি। শুরু থেকেই পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম অংশের এক ধরনের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ কায়েম হয়। সেই বাংলার মাটি চিরতরে স্বাধীন করার বীজ বপন করা হয় ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবির মধ্য দিয়ে। মূলত বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ছয় দফা দাবি বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভ এবং ছয় দফাই বাঙালির ‘মুক্তির সনদ’।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর