সংসার চলার একমাত্র সম্বল শাক-সবজি ও সুপারি গাছ কেড়ে নিল চাচাতো ভাইয়েরা

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে শাক-সবজি গাছ ও সুপারি গাছ নষ্ট করলো সৎ-চাচাতো ভাইয়েরা। পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির সামনে দুটি ফসলি জমিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে সৎ চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর ও নাসিরসহ ৩/৪ জন। এবং ফসলি জমির পাসে খালে নষ্ট করা বেশিরভাগ গাছ ফেলে দেয়া হয়। পানির স্রোতে গাছ গুলো ভেসে গেলেও পরদিন শুক্রবার সকালে খালের পাসে কিছু গাছ দেখা যায়। এ ঘটনায় ইন্দুরকানী থানায় অভিযোগ দিতে গেলে গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মহাশিন।

ওই গ্রামের মৃত নাদের আলীর ছেলে ভুক্তভোগী মো: শামিম হাওলাদার (মহাশিন) (১৭)। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিত্যক্ত জমিতে কৃষি দিয়ে সংসার ও লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। ফসলি জমির পাশেই রয়েছে খাল সেই খালে ধম্ম জাল দিয়ে মাছ শিকার করতেন মহাশিন। সেই জালটিকেও নষ্ট করেছে অভিযুক্তরা। মহাশিন টগড়া কামিল মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষে পরিক্ষা দিয়েছেন। তার পরিবারে রয়েছে দুই বোন তারাও ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। রয়েছে বৃদ্ধ মা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গ্রামের হাওলাদার বাড়ি সংলগ্ন দুটি ফসলি জমিতে ৩০টি লাউ গাছ, ৪০টি টমেটো গাছ, ১০০টি বেগুন গাছ, ২০০টি পুইশাক গাছ, ১৫০টি মরিচ গাছ, ৪/৫ শত সুপারি গাছের চাড়া, ২৫ টি পেপে গাছ, ৮০ টি ছিমি গাছ, পালন শাক, লালা শাক, ধুনিয়া শাকের গাছসহ মাছ ধরার জাল ও নেট জাল নষ্ট অবস্থায় দেখা যায়।

শিক্ষার্থী শামিম হাওলাদার (মহাশিন) বলেন, আমার পিতা ৫ বছর আগে মারা গেছেন। তারপর থেকে আমি কৃষি দিয়ে সংসার ও লেখাপড়ার খরচ বহন করি। আমার সেই কৃষি ক্ষেতের সব ফসল বৃহস্পতিবার রাতে চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর ও নসিরসহ ৪/৫ জন মিলে নষ্ট করেছে। তারা আমাদের জমি জোরকরে দখল করতে চায় এজন্য কিছুদিন আগেও আমি কৃষি কাজ করার সময় তারা আমার ওপর হামলা করে। এবং এর আগে দুইবার দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। সেই সাথে উল্টো ৩/৪ টা মিথ্যা মামলা দিয়েছে আমাদের পরিবারের ওপর।

শিক্ষার্থী মহাশিনের মাতা জামিরুল বেগম বলেন, আমাদের একমাত্র সম্বল এই ফসল সেটুকুও নষ্ট করে ফেলেছে। এবং আমার ছেলের ওপর ৩ বার হামলা করেছে। আমার ছেলে মহাশিনকে মেরে ফেলতে চায় এ জন্য ১০ লাখ টাকা রেখেছে মামলায় খরচ করবে। এসব হুমকি দিয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। আইনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই এবং প্রশাসনকে অনুরোধ করধি আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

প্রত্যক্ষদর্শী সবুর জান বেগম (৭৫) বলেন, আমার স্বামীর কাছ থেকে জোর করে সব জমি লিখে নিয়ে গেছে। পরে আমার স্বামী সেই চিন্তায় না খেয়ে মারা গেছে। এখন আমি ভিক্ষা করে খাই এবং রাতে অন্যের ঘরে থাকি। এখন মহাশিনের পরিবারের ওপর নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেছে। ওই কৃষি ওরাই নষ্ট করেছে। আমি এর বিচার চাই।

এবিষয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর হাওলাদারের স্ত্রী বলেন, এ ঘটনার কিছুই জানিনা। একটা ঘটনা ঘটলে মানুষ বিভিন্ন কথা বলবে।

ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এ ঘটনা জানার পর গ্রাম পুলিশকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিভিন্ন ফসল নষ্ট করা হয়েছে। তাদের দুপক্ষের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। চেয়ারম্যান ও প্রভাবসালী লোকদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ সমাধান অপর পক্ষ মানেনি। এর আগেও মহাশিন ছেলেটার ওপর ৩ বার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর