বার্তা বাজারে সংবাদ প্রকাশের পর ‘মাটিখেকোদের’ বিরুদ্ধে অভিযান

বার্তা বাজার অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাভার উপজেলা প্রশাসন শিমুলিয়া ইউনিয়নের সেই অবৈধ ‘টপ সয়েল’ উত্তোলন চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: মাজহারুল ইসলাম এর নির্দেশনা মোতাবেক আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন শিমুলিয়ার রাঙ্গামাটি ও লালারটেক স্কুল সংলগ্ন বংশাই নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় মাটি উত্তোলন চক্রের ৮ সদস্যকে ভ্রাম্যমান আদালত ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, জনপ্রিয় মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা বাজারে গত ১৬ জানুয়ারি “সাভারে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির ‘টপ সয়েল’!” শিরোনামে একটি টেক্সট নিউজ ও একই শিরোনামে গত ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বয় এর বক্তব্য ছিলো, দ্রুত অবৈধ ‘টপ সয়েল’ উত্তোলন চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই অভিযান।

এব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন বার্তা বাজার প্রতিনিধিকে জানান, একটি অবৈধ চক্র কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি অবৈধভাবে কেটে নিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রী করছে এমন তথ্য জানতে পেরে আজ (বৃহস্পতিবার) আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি ও লালারটেক স্কুলের পাশে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে অভিযান পরিচালনা করি। এসময় ৮ জনকে মাটি কাটা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা হয়। তারা ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি অবৈধভাবে কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রী করছিলো।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের জরিমানা ও কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আর জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কোনো ফসলি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ধৃত ৮ জনের প্রত্যেককে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ এর ১৫ ধারা মোতাবেক ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

এধরণের অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন।

উল্লেখ্য, অভিযানকালে ধৃত ওই ৮ জন হলেন- মোঃ রছুল উদ্দীন, মোঃ রাজিব, মোঃ মামুন ইসলাম, মোঃ শিপলু হােসেন, মোঃ জুলহাস হােসেন, মোঃ আকবর হোসেন, মোঃ সাইফুল হোসেন এবং মোঃ মোসলেম।

এব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: মাজহারুল ইসলাম জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার প্রবণতা ভয়ংকর এবং তা কৃষির জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে মাটি সবচেয়ে মূল্যবান। জমির উপরিভাগের ছয় থেকে সাত ইঞ্চির মধ্যেই থাকে সব ধরনের জৈব গুণাগুণ। অথচ এটাই কেটে নেওয়া হলে এসব জমির উৎপাদনশীলতা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায়। এতে করে ফসলের উৎপাদনে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। ক্রমাগত কমতে থাকবে ফসল উৎপাদন। যার ফলে অধিক চাষাবাদেও ফলন হবে কম।

তিনি আরও বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পড়ে কিছু জমির মালিক না বুঝে অল্প টাকার লোভে নিজেদের জমির মাটি বিক্রি করে দেন। অনেক সময় জমির মালিককে না জানিয়ে রাতের আঁধারেই কেটে নেওয়া হয় ফসলি জমির (টপ সয়েল) উপরিভাগের মাটি। তবে এবিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন সবসময়ই সতর্ক দৃষ্টি রাখে। এর ধারাবাহিকতায় সাভার উপজেলা প্রশাসন আশুলিয়ার শিমুলিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেছে।

এধরণের কর্মকাণ্ডকে সাভার উপজেলা প্রশাসন কখনোই প্রশ্রয় দেবে না এবং এই অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান সাভারের ইউএনও মাজহারুল ইসলাম।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর