আক্কেলপুরে ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ!

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে গোপনে ডেকে নিয়ে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষককে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে প্রবেশ দ্বার এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করে ও সরকারী কর্মকর্তাদের পথ অবরুদ্ধ করে।

রায়কালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম মানিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠায় ওই বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। এছাড়াও ওই শিক্ষকের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট বিভিন্ন অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময় ওই বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে গোপনে কৌশলে ডেকে নিয়ে কু-প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে তার মাকে জানায়। পরে ওই শিক্ষার্থী ও তার মা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানায়। ঘটনাটি প্রায় ছয়দিন অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ঘটনাটি এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জের ধরে বুধবার সকাল থেকে অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করে ওই শিক্ষককে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিষয়টি টের পেয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মানিক বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. ফিরোজ হোসেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার ঘটনাস্থলে আসেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন না হলে থানা পুলিশের সহায়তায় ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে হাজির করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। পরে ওই শিক্ষককে উপজেলা পরিষদে নিয়ে আসতে গেলে উত্তেজিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পথরোধ করে এবং কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে শুয়ে পরে। এতে সকলেই বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ হয়ে পরে। পরে সকলের সম্মতিক্রমে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং অভিযোগটি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পথ ছেড়ে দেয়।

গত সোমবার এই প্রতিবেদক এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাটি গোপন করার জন্য প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন টালবাহানা করেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ আরো দুই জন শিক্ষকের উপস্থিতিতে তারা জানান, ‘অন্য ঘটনাকে ভিন্নরূপ দেওয়ার জন্য একটি মহল টেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। পরে ওই অভিভাবক এসে ভুল স্বীকার করে গেছে।’

ভূক্তভোগী ওই ছাত্রীর সাথে আজ কথা হলে ছাত্রী বলেন, ‘আগে স্যার আমাকে ফোন দিতে বলত, আমি দেইনি। দেখা হলে ওই স্যার আমাকে বলেন, তোমাকে ফোন দিতে বলেছিলাম, ফোন দাওনি কেন? তখন স্যারকে বলি কি বলবেন বলেন? তখন তিনি বলেন এখানে হবেনা, নির্জন জায়গা লাগবে। তখন আমি বলি, কী বলবেন এখানেই বলেন। তখন সাইডে নিয়ে গিয়ে তিনি বলেন, তুমি কী করবে মনে হয়, আমার সাহস হচ্ছেনা। তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে, ভবিষ্যতে তোমার চাকুরীর দায়িত্ব নিতে চাই। এমন হলে কেমন হবে?’।

অভিযুক্ত সহাকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম মানিক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আদৌ সত্য নয়। ষঢ়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে’।
ওই বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এমন শিক্ষকের শিক্ষকতা করার কোন অধিকার নাই। তাকে চুড়ান্তভাবে বরখাস্ত করতে হবে, এটাই দাবি’।

আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,‘ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনা ঘটেনি। ওই শিক্ষককে নিরাপদে তার আত্মীয়-স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার জানান, ‘ঘটনাটি সঠিকভাবে খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ওই শিক্ষককে শ্রেণি এবং বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে’।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর