সাতক্ষীরার উৎপাদিত টমেটো ঢাকাসহ সারাদেশের বাজার দখল করে নিতে শুরু করেছে। অন্য ফসলের তুলনায় টমেটো বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বিভাগের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক টমেটো চাষ করে সফলতা পেয়েছে।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলা, কলারোয়া, পাটকেলঘাটা, তালা দেবহাটা, কালিগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় বিঘা বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করা হচ্ছে। জেলার চিংড়ী ঘেরের ভেড়িবাঁধের উপর সুদৃশ্য এবং অধিকতর উৎপাদনশীল টমেটো বাগান অপার সৌন্দর্য বিকিরন করছে এবং ব্যাপক ফলন হওয়ায় চাষীরা আনন্দিত হচ্ছে।সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ৭১২ দশমিক ৫০ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল গ্রীষ্মকালীন বারি টমেটো চাষ হয়েছে।এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৬০ বিঘা, কলারোয়ায় ৫৫৫ বিঘা, তালায় ৭৫ বিঘা, কালীগঞ্জে ১৫ বিঘা, শ্যামনগর সাড়ে সাত বিঘা এবং আশাশুনিতে দুই বিঘা।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চাষ হচ্ছে কলারোয়া উপজেলায়।

সাতক্ষীরার জলবায়ুর প্রভাবে লবনাক্ত মাটিতে টমেটো উৎপাদিত হওয়ায় ব্যাপক হারে টমেটো চাষ হচ্ছে। সাতক্ষীরার টমেটো চাষীরা জানান উদ্ভাবন করা টমেটো জাতের মধ্যে বাহার, বিনা টমেটো-৪, বিনা টমেটো-৫, বারি টমেটো-২, রতন, মিন্টু, টমেটো-৫ অধিক ফলন দিচ্ছে। টমেটো গাছ রোপনের পর থেকে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে টমেটো বাজার জাত করনের সময় সৃষ্টি হয়। প্রতিগাছ থেকে ৬/৭ বার টমেটো সংগ্রহ করা যায়। মানব দেহের রোগ প্রতিরোধকারী সবজি হিসেবে টমেটোর বিকল্প নেই। যথাযথ উৎপাদন হলে এবং টমেটো খেতের পরিচর্যা সময় মত নিলে একর প্রতি ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন টমেটোর ফলন পাওয়া সম্ভব দাবি কৃষি বিভাগের।
সাতক্ষীরার টমেটো চাষের সফলতা এবং উৎপাদন এমন পর্যায়ে বেড়েছে যে জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সাতক্ষীরার টমেটো বাজার জাত হচ্ছে। নতুন নতুন টমেটো চাষী টমেটো চাষে এগিয়ে আসছে। জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমান সময়ে এই চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বহু শ্রমজীবী পরিবার জীবনজীবিকার ক্ষেত্র হিসেবে টমেটো চাষে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া তাদের উৎপাদিত টমেটো রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাজার দখল করতে শুরু করেছে।
তবে এক শ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরার উৎপাদিত গুনাগুন সমৃদ্ধ টমেটো সুনাম নষ্ট করতে কাঁচা টমেটো বাগান হতে তুলে তাতে নানান ধরনের মেডিসিন মিশ্রন করে কৃত্রিম ভাবে পাকানোর চেষ্টা করছে। যা স্বাস্থ্য হানীর কারন এবং মানব দেহের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর।
চাষীরা জানান, টমেটো চাষের সাফল্য ধরে রাখতে হলে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। চাষীদেরকে কম সূদে বিনা সুদে ঋন দিতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রনোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে টমেটো চাষ আর এই চাষ অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে এমন প্রত্যাশা চাষের সাথে সংশ্লিষ্টদের।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, উচ্চফলনশীল গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ লাভজনক। হেক্টরপ্রতি ১০-১১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। তারপরও কৃষকের পক্ষে হেক্টরপ্রতি ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব।
বার্তাবাজার/এম আই