বায়ু দূষণে হুমকির মুখে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য

রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরের বায়ু দূষণ যেন দুর্যোপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এর প্রভাবে বিভিন্নমাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নগরবাসীর একটি অংশ। হুমকির মুখে পড়েছে সবার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা মিলনায়তনে ‘ঢাকার বিপদজনক বায়ু দূষণ রোধে আশু করণীয়’- শীর্ষক সম্মেলনে বিষয়গুলো তুলে ধরেন বক্তারা।

ডব্লিউ বিবি ট্রাস্ট, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), জনউদ্যোগ, আইইডি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), গ্রিনফোর্স, পরিবেশ সংসদ (ঢাবি), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের (বানিপা) যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়।

বায়ুর মান উদ্ধৃতি করে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর চারটি দুঃখিততম নগরীর একটি হিসেবে দুর্নাম কুড়িয়েছে ঢাকা। গত মাসের বেশ কয়েকদিন বিশ্বের দূষিত নগরীগুলোর মধ্যে ১ নম্বরে ছিল ঢাকা। এয়ারভিস্যুয়ান তথ্য অনুযায়ী— জানুয়ারির প্রথম ২৪ দিনের মধ্যে ২৩ দিন ঢাকার বায়ুমান বিপদজ্জনক ছিল। বায়ুমান পরিমাপের একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি রয়েছে। এটি একিউআই (AQI-Air Quality Index) দ্বারা প্রকাশিত হয়। বায়ুমানের সূচক বা একিউআই ০-৫০ হচ্ছে ভালো বা স্বাস্থ্যকরা Goodf. ৫১-১০০ হলো মধ্যমমানের (Moderate), ১০১-১৫০ হচ্ছে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর (Unhealthy to Semative persons), ১৫১-২০০ হচ্ছে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর (Unhealthy), ২০১-৩০০ হলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর (very Unhealthy), বিপদজনক (hazardous)। গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার বাতাসের সর্বোচ্চ মান ছিল একিউআই ৬৩৫ (AccuWeather) বায়ুমান বিপদজনক পর্যায়ে উপনীত হলে, সবাইকে ঘরের ভেতর থাকতে বলা হয়। এসময় ঘরের বাইরে গেলে বা কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার পথে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ মানতে বলা হয়। একই সঙ্গে ঘরে থাকলে জানালা এবং দরজা বন্ধ রাখতে বলা হয়।

তারা বলেন, বায়ুমান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হলে- যারা হাঁপানি ও বিভিন্ন ধরনের শ্বাসতন্ত্রের রোগী এবং সংবেদনশীল তারা কোনোক্রমেই ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। অন্যদের জন্য বের না হওয়া এবং বাইরে শারীরিক শ্রমের কাজ না করার জন্য বলা হয়।

আয়োজকরা বলেন, অস্বাস্থ্যকর বায়ুমানের সময় সংবেদনশীল ব্যক্তিরা পারতঃপক্ষে বাইরে বের হবেন না এবং অন্যরা বের হলেও কম সময় বাইরে থাকবেন এবং শারীরিক শ্রমের কাজ তেমন করবেন না। বায়ুর মান ১০১-১৫০ হলে সংবেদনশীল ব্যক্তিরা সাবধানে থাকবেন। তাদের জন্য বাইরে বের না হওয়া উত্তম। বায়ুমান মধ্যম থাকলে কেবলমাত্র অতিসংবেদনশীলদের সাবধানে থাকতে হয়।

বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে— দূষিত বায়ুতে বাস করলে তাৎক্ষণিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে নানাধরনের দীর্ঘমেয়াদী অসুখ হতে পারে। এরমধ্যে হাঁচি-কাশি, নাকের অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে শুরু করে তীব্র প্রাণঘাতী নিউমোনিয়া, টিবি, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ হতে পারে। উচ্চরক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, কিডনি ও লিভারের অকার্যকারিতা, বন্ধাত্বা, গর্ভপাত, শিশুর বিকাশ সমস্যা, স্বল্প ওজনের বাচ্চা প্রসব, অকাল প্রসব, গর্ভস্থ শিশুর বিকলাঙ্গতাসহ আরও নানাবিধ রোগ সৃষ্টির সাথে বায়ু দূষণের সরাসরি সংযুক্তি রয়েছে। দূষিত বাতাসে থাকলে দুর্বলতা বোধ হয়, মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, চারপাশের মানুষের সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এসবের ফলে ব্যক্তিত্বের বিশৃঙ্খলা বা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার তৈরি হয়। শিশু, বয়স্ক গর্ভবর্তী নারী, শ্বাসতন্ত্রের রোগী, সংবেদনশীল ব্যক্তি এবং কমজোরি প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বায়ু দূষণে দ্রুত আক্রান্ত হয়। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে অন্য প্রাণিকুল, উদ্ভিদসহ প্রাণচক্রের প্রতিটি সদস্য কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ বায়ু দূষণের জন্য পুরো বাস্তুসংস্থানতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে।

তারা বলেন, বায়ু দুষণের প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে- ব্যক্তিগত বাড়ি বানানো থেকে শুরু করে নানাধরনের নির্মাণ প্রকল্প ইটভাটা, মোটরযানের ফিটনেসের অভাব, নিম্নমানের মোটর জ্বালানি, নগরীর ভেতরের শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক বর্জ্য, অফিস দোকান ও গার্হস্থ্য বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ইত্যাদি। বায়ু দূষণের দায় কেবলমাত্র একপক্ষের নয়, এই দায় প্রকৃতপক্ষে বহুপক্ষের ওপর বার্তায়। যেমন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বা ব্যক্তি ‘পরিবেশ রক্ষার শর্তাদি মেনে কাজ করে না।

বক্তারা আরও বলেন, বায়ু দূষণ দেখভাল বা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের ছিল তারা তা পালন করছে না। মোটরযানের ফিটনেস, জ্বালানি তেলের মান নির্ধারণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই একই দৃশ্য বিরাজমান। বাণিজ্যিক অফিস ও বাহ্য বা ব্যবস্থাপনায় একটি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি এখনও গড়ে উঠেনি।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর