সন্ধান চান স্ত্রী, নিখোঁজের ৬ দিন পর নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী আবু আসিফ

শুক্রবার থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফের সন্ধান চান তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি)বিকেলে তিনি তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবী জানান।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা অসেক আতংকের মধ্যে আছি, কিছুই বলতে পারছি না। যে করেই হাউকা আমার স্বামীকে খুঁজে দেন। তিনি বলেন তার স্বামী আবু আসিফ একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি যদি থাকতেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হতেন। তবে সম্প্রতি একটি অডিও কল ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

এছাড়াও তিনি বলেন, বাসায় কেউ আসতে পারছেনা। সাদা পোশাকে অনেকেই ছবি তুলছে। তিনি জানান, স্বামীর সন্ধ্যান পেতে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। যা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আশুগঞ্জ থানার ওসি ও স্থানীয় প্রেস ক্লাবে এ দরখাস্তের অনুলিপি দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও গত বুধবার রাতে নিখোঁজ হওয়া তার শ্যালক ও নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী শাফায়েত সুমন ফিরে এসেছেন। এ সময় তিনি জানান, গ্রেফতার আতংকে তিনি পালিয়ে ছিলেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকেন।

কিন্তু তার ভগ্নিপতির নিখোঁজ হওয়ার খবরে তিনি সোমবার রাতে আশুগঞ্জে নিখোঁজ আবু আসিফের বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে কার চাপে পালিয়ে ছিলেন সে বিষয়ে কোন পরিস্কার তথ্য দেননি তিনি। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফের স্ত্রীর দরখাস্তে বলেন, ‘প্রচারণার ক্ষেত্রেও আমরা কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায়নি। ভোট কেন্দ্রে যাদেরকে এজেন্ট দেবো তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে যেভাবেই হোক জিতিয়ে নেয়া
হবে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করিনা। আমরা বিশ্বাস করি এতকিছুর পরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমার স্বামী আবু আসিফ আহমেদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। এমতাবস্থায় ভয়ে আমরা এ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করতে পারিনি। কিছু সংখ্যক সংবাদকর্মী স্বত:প্রণোদিত হয়ে আমার বাসায় আসলে আমি তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করি।

এরপর এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে নির্বাচন কমিশন থেকে আমার স্বামীকে খুঁজে বের করাসহ তদন্তের নির্দেশ এসেছে বলে আমরা জানতে পারি।’ তিনি জানান, এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে, ভোটাররা ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পর বিশেষ প্রার্তীকে জেতানোর জন্য অন্যরা প্রতীকের বাটনে চাপ দিয়ে দেবে বলে এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া তিনি দরখাস্তে সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া পূর্ব, কুট্টাপাড়া পশ্চিম, সৈয়দটুলা গরের পাড়, আবিথটুলা, সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও উচালিয়া সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, আমরা তার সন্ধান পেতে যথা সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ শাহগীর আলম জানান, আমরা একটি দরখাস্ত পেয়েছি। নিখোঁজের ৪ দিন পর তারা এটি দিয়েছেন। আমরা গতকালই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে রেখেছি।

উল্লেখ্য, আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া প্রধান প্রতিদ্বদ্বী তিনি। গত ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বেড়িয়ে আর বাসায় ফেরেনি। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি (বুধবার) আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান মুসা মিয়াকে ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়। তিনি একজন ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষ ও এলাকার স্বনামধন্য সালিশকারক। পরে গ্রাম্য ঝগড়ার মীমাংসিত ঘটনার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওই দিন থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয়ক আবু আসিফের শ্যালক শাফায়াত সুমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। অবশেষে তিনিও ফিরে এসেছেন। এছাড়াও সোমবার থেকে একটি অডিও কল সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই অডিও কলটিকে আবু আসিফের স্ত্রী ও বাড়ির কেয়ারটেকার বলে আলোচনা রয়েছে। যেখানে স্ত্রী মেহেরুন্নেছা কেয়ারটেকারকে তার স্যারের সকল কাপড় চোপড় গুছিয়ে এবং সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন ও স্যার কোথায় আছেন তা কাউকে না জানাতে বলেন।

বার্তাবাজার/জে আই

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর