অবাধে বিক্রি হচ্ছে ফসলী জমির মাটি

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আবাদি কৃষি জমিকে অনাবাদি করতে মরিয়া এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা। শতশত একর জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে অনাবাদি করে মাটি পাচারে মেতে ওঠেছে তাঁরা। এতে করে ফসলী জমির উৎপাদন আশানূরুপ হচ্ছে না জানিয়েছে কৃষি অফিস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ জামশা , চারিগ্রাম ও খোলাপাড়ারা এলাকাসহ উপজেলার প্রায় এলাকায় খনন যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে দুই থেকে তিন ফুঁট গভীর করে কৃষি জমির উপরের অংশ কাটা হচ্ছে। জমির মাঝখান দিয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তা করা হয়েছে। মাটি বহণ করছে ছয় চাকার ট্রাক্টর ও দশ চাকার ভারি ড্রাম ট্রাক। রাতে ড্রাম ট্রাকযোগে মাটি বিভিন্ন উপজেলাতেও পাচার করে দিচ্ছে এ চক্র। ট্রাক্টর প্রতি মাটি বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকার উপরে এবং ড্রাম ট্রাকের মাটি প্রায় ১০ হাজার টাকায়। আর দশ চাকার ট্রাক প্রতি ১২ হাজার টাকা। ইটভাটা বসতবাড়ি ও ভবন নির্মাণের জায়গা ভরাট করতে এসব মাটি ব্যবহার হচ্ছে।

সচেতন মহল জানান, সিংগাইর উপজেলাতে বৈধ- অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ইট তৈরীতে কৃষি জমির উর্বর মাটি ভালো হয়। তাই ইটভাটা মালিক ও দালাল চক্রের সমন্বয়ে কৃষকদের ফাঁদে ফেলে এ উর্বর মাটি অল্প দামে কিনে নিচ্ছে। গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় ওইসব জমিতে আগের মত ফসল ফলছে না। এখনই কৃষি জমি রক্ষায় তৎপর না হলে অনাবাদি হয়ে যাবে এ উপজেলার কৃষিক্ষেত।

কথা হয় মাটি ব্যাবসায়ী চারিগ্রাম এলাকার মৃত সওদাগর বেপারীর ছেলে পাপুল ও মো. আমজাদ (আরশু) এর ছেলে খোরশেদ আলমের সাথে। তারা বলেন অবৈধ জেনেও লাভজনক হওয়ায় মাটির ব্যবসা করছি।

জামশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী কামরুজ্জামানের ভাই মো. মোতালেব মিয়া বলেন, আমি নই চেয়ারম্যান মাটির ব্যবসা করে।

খোলাপাড়া এলাকার এএবি ইটভাটার মালিক মো. কুদ্দুস মিয়া বলেন, আমার ছেলের কলেজ বন্ধ থাকলে ভেকু চালায়। আমার বক্তব্য আপনার যা মন চায় লিখেন। এর আগে ১০ জানুয়ারি কৃষি জমিতে মাটি কাটা নিয়ে দর্পভরে তিনি বলেছিলেন তার ওখানে অবৈধভাবে মাটি কাটলেও কোন অভিযান হবেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক কয়েকজন দালাল বলেন, প্রথমে এক কৃষককে ফাঁদে ফেলে তাঁর জমি থেকে মাটি কেনা হয়। ওই জমি নিচু হয়ে গেলে তখন পাশের জমির কৃষকও বাঁধ্য হয়ে তাঁর জমির মাটি বিক্রি করে, এভাবে শুরু করেন মাটি কেনার কাজ।

কৃষি জমির উর্বর মাটি ‘টপ সয়েল’ বিক্রি বন্ধে কৃষকদের সচেতন করছেন বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন। তিনি বলেন কৃষি জমির প্রাণ শক্তি জমির উর্বর মাটি, এটি আমাদের সম্পদ। যার ওপরের অংশে জৈব সার। এ জৈব সার বিক্রি করে দিলে ওই জমিতে আগের মত ফসল ফলে না। সার প্রয়োগ করলেও কাজে আসে না।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, সিংগাইরের নির্বাহী কর্মকর্তাকে কৃষি জমি রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর