ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মনিপুর স্কুল!

রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন। নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ফরহাদকে অপসারণের দাবি করেছেন স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরেইউ) সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এ দাবি করেন অভিভাবকরা। তারা মনে করছেন অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনকে না সরালে ধ্বংস হয়ে যাবে এক সময় আলোচনার তুঙ্গে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অভিভাবক ফোরামের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

অভিভাবকরা জানান, মনিপুর স্কুলের ছয়টি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ হাজার। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় শতকোটি টাকার বেশি। কিন্তু স্কুলের আর্থিক দুর্নীতির খতিয়ান এভারেস্ট সমান। আয় ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই। আয়ের বেশিরভাগ টাকাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষও তার অনুসারীরা।

স্কুলের আইডি কার্ড ফি, স্পোর্টস ফি, পানি-গ্যাস ফি, মিলাদ ফি, বিদ্যুৎ ফি’র নামে দরিদ্র তহবিল খাতে টাকা নেওয়া হয়। অথচ, শিক্ষার্থীরা এর কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না। কোনো কোনো শাখার প্রধানরা স্কুলেই কোচিং বাণিজ্য চালান। অভিভাবকদের সামান্যতম অধিকার নেই স্কুলে। কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের ভয় দেখান ফরহাদ।

অভিভাবকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ছিলেন সাধারণ শিক্ষক। এখন তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে তার নিয়োগ অবৈধ হলেও এখনও তিনি বহাল তবিয়তে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি অধ্যক্ষ পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু আদালত অবমাননা করে তিনি এ পদ জোর করে দখল করে আছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারকে ভুল বুঝিয়ে তার ও তার মেয়েসহ আরও কয়েকজনের নামে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে ট্রাস্ট করার অপচেষ্টা চালান ফরহাদ। কিন্তু স্কুলটির এমপিও চালু থাকা, জমির মালিক সরকার, নুর মোহাম্মদ মিয়া এবং লায়লা বেগম হওয়ায় তাদের সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ কে এম দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি মনিপুর স্কুলে কয়েকটি সিলিং ফ্যান দান করে নিজের নামে ট্রাস্ট করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। পরে বিষয়টি অভিভাবকদের নজরে আসে। তারা সেই অপচেষ্টা, অবৈধভাবে সরকারি সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ১৯৮৩ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। শিক্ষকরা তখন থেকে আজ অবদি এমপিওর টাকা পেয়ে আসছেন। কিন্তু ফরহাদ হোসেন শিক্ষকদের এমপিও শিটে সই করা বন্ধ করে দেন ২০১৬ সালে। ফলে এমপিওভুক্ত হলেও শিক্ষকরা সরকারি কোনো ভাতা তুলতে পারেন না। তাদের জোর করে এমপিও প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি সরকারি তদন্তে প্রমাণিত।

পুন:ভর্তি ফি আদায়ে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা নেওয়া হচ্ছে। ফরহাদ হোসেন অধ্যক্ষের ক্ষমতা পাওয়ার পর চার শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতি নিয়োগে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার বিনিময় হয়েছে। নিয়ম ভেঙে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এমন দুর্নীতি থেকে অবিলম্বে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিচকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন অভিভাবকরা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক ফোরামের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী, সদস্য একলিমুর রেজা কোরাইশ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বার্তাবাজার/জে আই

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর