দেবীদ্বারে আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, জানেন না উপজেলা সম্পাদক

দীর্ঘ ২৬ বছর পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকটি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি করার জন্য ওই সময় স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা সাধারণ সম্পাদক, নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিদায়ি কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট সাতজনকে দায়িত্ব প্রদান করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

কিন্তু নবনির্বাচিত উপজেলার সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে জেলার সাধারণ সম্পাদক আর কারোর সাথে কোনো সমন্বয় না করে গত ১৫ জানুয়ারি বেক ডেইট দেখিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ দেবীদ্বার উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারী সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত ১৫ জানুয়ারী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। যাতে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মিডিয়ায়ও ভাইরাল হয়।

সমন্বয়হীনতার পূর্নাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে অধ্যক্ষ মো. আবদুল্লাহ মাসুদ পাখি, মো. মোসলেহ উদ্দিন মাস্টার, আনোয়ার হোসেন খোকন, মো. মফিজুল ইসলাম দুলাল, মো. আবদুল জলিল চৌধুরী, মো. লুৎফর রহমান বাবুল, মো. আবদুলল কুদ্দুছ, মো. সামছুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মো. ওমর ফারুক, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট হারুনুর রশীদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফারুক আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. আলী আশরাফ, দফতর সম্পাদক হাজী আবুল কালাম আজাদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট এনামুল হক মাসুম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাজী মো, মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন মোল্লা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নাজমা আক্তার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযুদ্ধা আবদুস সালাম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল কাইয়ুম, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহাৎ হোসেন শিমুল, শ্রম সম্পাদক সুজিত কুমার পোদ্দার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন মামুন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মো. মোস্তফা কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল আলম তুষার, মো. মোস্তাফিজুর রহমান সরকার, মো. মীর্জা বাহাদুর, সহ দফতর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বাহাউদ্দিন আহমেদ বাহার, সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মোরশেদ আলম খান ও কোষাদক্ষ মো. মহিউদ্দিন মিঠু। এছাড়া ৩৪ জনকে এ কমিটিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন উপজেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের জানালে তারা ওই কমিটি স্থগিত করেছেন বলে দাবি করেন। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দাবি, সমন্বয়হীনতা করে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পরবর্তীতে পূর্নাঙ্গ কমিটি প্রকাশের তিন দিনের মাথায়
গত ২৬ জানুয়ারী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির নির্দেশে ওই ইউনিটের দফতর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজীব স্বাক্ষরিত আরেক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রের নির্দেশিত দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ছাড়া প্রকাশিত ৭১ সদস্যের কমিটির নতুন ৬৫ জনের পদ স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক এক নেতার অভিযোগ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের একক ক্ষমতায় এ কমিটির নতুন নামগুলো প্রকাশিত হয়েছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে না জানিয়ে ফেসবুক আইডিতেও শেয়ার করেন। স্থানীয় পর্যায়ে যাদের এ কমিটিতে থাকার কথা তাদের বাদ রেখে নিজের পছন্দের লোক ও আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কমিটি গঠন করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যা জানাজানি হলে জেলা কমিটির সভাপতির হস্তক্ষেপে কেন্দ্রের ঘোষিত পদগুলো ছাড়া উপজেলা আংশিক কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেন।

নতুন করে কমিটিতে যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তাই তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সম্মলনের মাধ্যমে কেন্দ্রের ঘোষিত দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, ‘আমার সাথে ছলছাতুরী করে ও সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে না জানিয়েই এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা অফিশিয়ালরি ভাবে আমাকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। কে বা কারা এটা প্রচার করেছে তা তদন্ত করে বের করা হচ্ছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচনে সাত সদস্যের মধ্যে এমপিসহ পাঁচ সদস্যের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি।’

জানতে চাইলে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন বলেন, সমন্বয়হীনতার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এই কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।

এব্যাপারে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাষ্টার বলেন, জেলা কমিটির সভাপতি- সাধারণ সম্পাক কর্তৃক স্বাক্ষরিত অনুমোদিত কমিটি জেলা দফতর সম্পাদক স্থগিত করে দেয়ার এখতিয়ার নেই। তিনি অর্থের বিনিময়ে এ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে সবাই ত্যাগী এবং স্বচ্ছ ও জয় বাংলা-ধানের শীষ মার্কা লোকদের কমিটিতে রাখা হয়নি।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর