প্রাণপ্রিয় ভাইকে হারিয়ে বোনের আবেঘগন স্ট্যাটাস

প্রাণপ্রিয় ছোট ভাই তিতাস ঘোষকে বাঁচাতে আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন কেয়া ঘোষ। সঙ্গে মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ সময় একটি সেকেন্ডও যে মহামূল্যবান। এরকম কঠিন মুহূর্তে তিতাসকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে এসেই আটকে যায়। ফেরি থাকলেও সেটি ছাড়ছিল না, অপেক্ষা করছিল যুগ্ম সচিব পদের এক ‘ভিআইপি’র জন্য। তিতাসের স্বজনরা ফেরিঘাটের সংশ্নিষ্টদের হাত-পা ধরে দ্রুত ফেরি ছাড়তে অনুরোধ করলেও তাদের মন গলেনি।৯৯৯ ফোন দিয়েও যখন ব্যর্থ তখন আর কি করার।অপেক্ষা করত হলো সেই ভিআইপি’র।

অথচ বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সরকারী কর্মকর্তারা হচ্ছে জনগণের সেবক। সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ আর সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনগণ হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক।

সেবকের স্থান কিভাবে মালিকের উপরে হয়? সেবকরা কীভাবে ভিআইপি হয়? প্রশ্নের উত্তর আপনারাই দিবেন।

অবশেষে প্রায় তিন ঘণ্টা পর সেই যুগ্ম সচিব ও এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তা আবদুস সবুর মণ্ডল উপস্থিত হন। ফেরিও যাত্রা শুরু করে। ততক্ষণে তিতাসের প্রাণভোমরা যায় যায় অবস্থা। ফেরিটি যখন মাঝনদীতে, তখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তিতাস।

তিতাসের এই করুণ মৃত্যুতে নিজের ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন বড় বোন কেয়া ঘোষ।পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হল-

‘আমরা সাধারণ মানুষ বলে কি, আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই? সাধারণ মানুষের জীবনের চেয়ে একজন ভিআইপির আত্মীয়ের ভ্রমণের জন্য তিন থেকে চার ঘন্টা ফেরি আটকে রাখা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিচের ছবি গুলো আমার ছোট ভাইয়ের, গত ২৪-০৭-১৯ তারিখে তার বাইক এক্সিডেন্টে তার অবস্থা খুবই গুরুতর হয়, তার মস্তিকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ২৫-০৭-১৯ তারিখ তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু যখন আমরা কাঠালবাড়ি ফেরি ঘাট-১ এ আনুমানিক রাত আটটায় পৌছায় তখন জানতে পারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের কোন একজন ভিআইপির আত্মীয় বিয়ে খেতে যাবে। তাই আনুমানিক তিন ঘন্টা যাবত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তিনি আসবেন বলে রাত আটটা থেকে এগারটা পযর্ন্ত অপেক্ষা করান, আমাদের সাথে আরও তিনটা এম্বুলেন্সে গুরুতর রোগী ছিলেন।

আমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ,কোন উপায় না দেখে স্থানীয় পুলিশ ,সেনাবাহিনীর লোকজন, পুলিশ আইজিপি, এমনকি 999 হেল্প লাইনে ফোন করি। কিন্তু কারো থেকে কোন সাড়া পাইনি, এমনকি ফেরি কতৃপক্ষের কাছে শত আকুতি জানানোর পরও তারা বলে যে ভিআইপির অনুমতি ছাড়া ফেরি ছাড়লে নাকি তাদের চাকরি থাকবে না। পরে আমরা পুলিশের মাধ্যমে সেই ভিআইপিকে আমাদের অবস্থার কথা জানায় কিন্তু তিনি কোন ভ্রুক্ষেপই করে নাই।

অবশেষে ৩ ঘন্টা পর সেই ভিআইপির গাড়ি এল, গাড়িটি ছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের তারপর ফেরি চলল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমরা ফেরিতে প্রায় মাওয়া ঘাটের বেশ কাছাকাছি তখন আমার ভাই শেষ নিংশ্বাস ত্যাগ করে। একটা ফুলের মত জীবন ঝরে গেল শুধুমাত্র নৌ-মন্ত্রনালয়ের ভিআইপির আত্বীয়ের খামখেয়ালি কারণে । এভাবে আমাদের দেশে বহু জীবন যায় তাদের খামখেয়ালির কারণে। এভাবেই কি চলবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ।’

তিতাসের এই হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। দায়ীদের বিচারের জোর দাবি উঠেছে।

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর