যার ফোনে ফেরি ছাড়তে দেরি তিনিই করলেন তদন্ত কমিটি!

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে নেয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সের গতি রোধ করে তিন ঘণ্টা আটকে রাখে শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ। কারণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল ঢাকায় ফিরবেন। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর সচিব আসার পর ছাড়া হয় ফেরি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তিতাসের।

ঘটনার কিছু আগে ‘ভিআইপি যাবে’ বলে ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালামকে বার্তা পাঠান মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। মূলত তার অনুরোধ রাখতেই ওই দিন দেরিতে ফেরি ছাড়া হয়। ফলে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় স্কুলছাত্র তিতাস।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তিতাসের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সেই জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলামই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল হক পাটোয়ারীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, এএসপি (সার্কেল) আবির হোসেন ও বিআইডব্লিউটিসির এজিএম (মেরিন) একেএম শাজাহান। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এবিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তিনি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে যাওয়ার আগে আমার কাছে ফেরিতে যাওয়ার বিষয়টি জানান। পরে আমি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালামকে ভিআইপি ফেরিতে ওঠার বিষয়ে বার্তা পাঠাই। কিন্তু ওই ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় রোগী আছে, তা আমি জানতাম না। ঘাটের ম্যানেজার এ বিষয় আমাকে কিছু জানাননি। রোববার বিষয়টি জানতে পারলাম আমি।

বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমি তখন অন্য ঘাটে ছিলাম। খবর পেয়ে ওই অতিরিক্ত সচিবকে ফেরিতে উঠানোর জন্য ঘাটে আসি। রাত ১০টার দিকে সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যক্তি রোগীবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স ফেরিতে উঠানোর অনুরোধ করেন। সচিবের গাড়ির সঙ্গে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি রাত ১১টার দিকে ফেরিতে উঠিয়ে দেই। পরে কি হয়েছে তা আমি জানি না।

একই ঘটনা তদন্তে আরেকটি কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিসি। বিআইডব্লিউটিসির জেনারেল ম্যানেজার মো. আশিকুজ্জামানকে প্রধান করে দুই সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হলেন সংস্থাটির ডিজিএম (মেরিন) মো. ফজলুল হক।

এরই মধ্যে সোমবার দুপুরে আশিকুজ্জামানের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিসির দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এর আগে সোমবার সকালে এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহনেওয়াজ দিলরুবা খানকে প্রধান করে দুই সদস্যের এ কমিটি করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর