৪৯ দিনে ১৫০০ কিলোমিটার হেঁটে ভারতের দার্জিলিংয়ে পৌঁছলেন বাংলাদেশি যুবক

ভাইজান আমি শান্ত আপনার ওয়াটসএ্যাপে সব ছবি, ভিডিওসহ তথ্যগুলো দিয়েছি তা একটু দেখবেন।
আপনার অভিযান কি শেষ?
:হ্যাঁ ভাই গতকাল ৪ টায় অভিযান সম্পন্ন করেছি, নেটের কারনে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে এখনো নেট নেই।
এখন আছেন কোথায়?
: ভারতের দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু এলাকায়।
কত কিলোমিটার হাঁটলেন?
: ১৫০০.৮৮ কিলোমিটার।
কত দিন হাঁটলেন?
মোট ৬৪ দিন। এর মধ্যে হেঁটেছি ৪৯ দিন আর বিশ্রাম নিয়েছি ১৫ দিন।

শনিবার (১০ডিসেম্বর) সকালে ফোনে কথা হচ্ছিল ‘হাঁটাবাবা’ সাইফুলের সঙ্গে। পুরো নাম সাইফুল ইসলাম, ডাকনাম শান্ত।

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষরোপণ ও অকাল পঙ্গুত্ব প্রতিরোধে বাংলাদেশ থেকে ভারতে হাইকিং অভিযান পরিচালনাকারী বাংলাদেশি হাইকার সাইফুল ইসলাম শান্ত তার লক্ষ্য অনুযায়ী ১৫০০.৮৮ কিলোমিটারের গন্তব্যের পথ শেষ করে এখন দার্জিলিংয়ে বিশ্রামে আছেন। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে গত ৭ অক্টোবর এই হাইকিং অভিযান শুরু করেন শান্ত।

এসময় তিনি ঢাকা- মাওয়া- মানিকগঞ্জ – গোপালগঞ্জ – নড়াইল – যশোর – বেনাপোল-পেট্রোপোল – উঃ চব্বিশ পরগোনা – কলকাতা – দঃ চব্বিশ পরগণা- হাওড়া- হুগলি – পূঃ বর্ধমান – নদিয়া – মুর্শিদাবাদ- মালদা- দঃ দিনাজপুর – উত্তর দিনাজপুর – জলপাইগুড়ি হয়ে দার্জিলিংয়ের সান্দাকফুতে যেয়ে অভিযান সমাপ্ত করেন।

এই অভিযানে ৪৯ দিনে প্রায় ১৫০০.৮৮ কিলোমিটার হাইকিং করেছেন তিনি।

শান্ত কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ভ্রমণকালে শান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ ও পঙ্গুত্ব রোধে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে পায়ে হাঁটার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্তই প্রথম বাংলাদেশি যে বাংলাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে ভারতে হাইকিং অভিযান করছে। এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব (বিএমটিসি) সদস্য পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল কলকাতা থেকে ১১ দিনে হাইকিং করে ঢাকা পৌঁছায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে হেঁটে শাহজাদা আরেফীন জয় শিলিগুড়ি গিয়েছিল।

তবে সেটি কোনো অভিযানের অংশ ছিল না। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাইফুল ইসলাম শান্তই একমাত্র বাংলাদেশ থেকে হাইকিং অভিযান করছে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের দার্জিলিং গিয়ে এ হাইকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। শান্ত এর আগে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’-এর সহায়তায় এবং ‘হাইকার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ’-এর তত্ত্বাবধানে টানা ৭৫ দিন হেঁটে হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন। ওই ৭৫ দিনের মধ্যে শান্ত বিশ্রাম নেন মাত্র ৪ দিন।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ভারতের পশ্চিম বাংলার দার্জিলিং শহরের সান্দাকফু থেকে মোবাইলে শান্ত বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব, অকালে পঙ্গুত্ব রোধে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার ওপর গুরুত্বারোপসহ পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা তৈরি ও জীবন বাঁচাতে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে এসবের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতেই ভারতে আমার এ অভিযান।

৬৪ দিনে ১৫০০.৮৮ কিলোমিটার পথ হেঁটেছি। এ ৬৪ দিনের মধ্যে ৪৯ দিন হেঁটেছি, ১৫ দিন বিশ্রাম নিয়েছি। আমি বর্তমানে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু এলাকায় অবস্থান করছি। এখানেই আমার এ লক্ষ্য সম্পন্ন হয়।’

শান্ত আরও বলেন, ‘এর আগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করে টানা ৭৫ দিন ৬৪ জেলায় প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে শেষ করেছি। আমাকে আজকের ভারত ভ্রমণে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

শান্তের বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বার্তা পৌঁছে দিতে আমার ছেলে শান্ত ভারতে অভিযান শুরু করেছে। আমি তাঁর স্বপ্ন পূরণ ও সফলতা কামনা করছি।’

‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’-এর প্রধান নির্বাহী অফিসার লিপটন সরকার বলেন, ‘আমি নিজেও ১৮ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছি। শান্ত আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। অ্যাথলেট হিসেবে তাকে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আগামী দিনেও ভালো কিছু করবে শান্ত। লিপটন সরকার আরও বলেন, মানুষের কিছু ভালো নেশা রয়েছে আবার কিছু খারাপ নেশাও আছে। এর মধ্যে এ ধরনের কার্যক্রম মানুষকে মাদক বা খারাপ নেশা থেকে দুরে রাখে। তাই দেশব্যাপী এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা মানুষের ভালো নেশাগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই।’

অ্যাথলেট সাইফুল ইসলাম শান্ত দেশের বৃহৎ রানিং গ্রুপগুলোর সক্রিয় সদস্য এবং কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলায় ‘দেবীদ্বার রানার্স’ নামে ২ হাজার সদস্যের একটি রানিং গ্রুপ পরিচালনা করে আসছেন। একজন নিয়মিত অ্যাথলেট হিসেবে তিনি ভ্রমণ, হাঁটাহাঁটি ও ট্রেকিং করে আসছেন।’

এ ছাড়াও আগামী দিনে শুধু বাংলাদেশ থেকে ভারতই নয় হেঁটে পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করে এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। হাইকার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাইফুল ইসলাম শান্তর হাইকিং অভিযানের সাফল্য কামনা করছেন অনেকে।

বার্তাবাজার/এম এইচ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর