ঋণ নেয়ার পরিবর্তে ৫৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করল ইসলামী ব্যাংক

‘ইসলামিক ব্যাংক তারল্য সুবিধা’ প্রবর্তনের পর প্রথম দুই দিনে শরীয়াহ-সম্মত ঋণদাতারা মোট পাঁচ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো ঋণ নেওয়ার পরিবর্তে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংককে ৫৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। তারল্য সহায়তা হিসেবে তাদের নিট ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৬৫৭ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে।

প্রথম দুই দিনে পাঁচটি ঋণদাতা ব্যাংক যথাক্রমে- ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের অধীনে পাঁচ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে যার লক্ষ্য শরিয়াহ-সম্মত ব্যাংকগুলোকে ১৪ দিনের স্বল্পমেয়াদী তারল্য সহায়তা প্রদান করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ পরিমাণের মধ্যে মঙ্গলবার তিন হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা এবং বুধবার এক হাজার ২৫২ কোটি টাকা ধার করা হয়েছিল, যেখানে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতা ছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আমানত উত্তোলনের কারণে বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক এখনও তারল্যতার চাপে ভুগছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করা একটি ইসলামী ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে জানান, গত কয়েকদিনে আমাদের ব্যাংক থেকে কিছু কর্পোরেট আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে আমাদের তারল্য দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। বিপরীতে, অনেক গ্রাহক ছোট আকারের নতুন আমানত জমা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রাহকদের আরো ভালো পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমাদের শাখা নেটওয়ার্কগুলো ভালো সেবা প্রদান করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় কিছু ইসলামী ব্যাংক তাদের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সাধারণ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ খুঁজছে। বিশেষ করে যাদের তারল্যের অবস্থা ভালো, তাদের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন মাসের জন্য ঋণ চাইছে।”

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা জানিয়েছেন, সব ইসলামী ব্যাংক তারল্য সংকটে নেই। বরং কয়েকটি শাখা অন্য ব্যাংককে ঋণ দেওয়ার অবস্থানেও রয়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে, যে কারণে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলোকে স্বল্পমেয়াদে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ঋণ প্রদান করেছি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন যে, শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদী ঋণের জন্য মূলত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ওপর নির্ভর করতো। তবে বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংকে সাম্প্রতিক তারল্য সংকট তাদের সমস্যায় ফেলেছে।

সোমবার ইসলামী ব্যাংকের তারল্য সুবিধা চালুর আগে তারা একে অপরের কাছ থেকে ঋণও নিয়েছিল।

বর্তমানে, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি শরিয়াহ অনুযায়ী কাজ করছে। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর