আগামী মার্চে চালু হতে পারে ভোলাগঞ্জ সীমান্ত হাট

সীমান্তে বর্ডার হাট চালু হলে উপকৃত হবে দুই দেশের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসতি স্থাপন গড়া ব্যক্তিরা। মজবুত হবে দুই দেশের সীমান্তবর্তী মানুষের মাঝে ভাতৃত্বের বন্ধন। গড়বে মৈত্রী। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জ জিরো লাইনে স্থাপিত হয় সীমান্ত হাট। দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষার পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এই বর্ডার হাট।

উদ্বোধন ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা দ্বি- পাক্ষিক বৈঠকে বসেন। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান। ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন সিলং সাব ডিভিসন সূরা ডিএম পুনিতা ড. আসওয়া ঘোষ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামিম আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং,থানা কর্মকর্তা সুকান্ত চক্রবর্তী,ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াফ আলী।

আগামী ২৪ কিংবা ৩১ ডিসেম্বর তারিখে হাট উদ্বোধনের জন্যে ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছে প্রস্তাব করেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। তবে ২৩ ডিসেম্বর ক্রিসমাস দিবস ও ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা নির্বাচনের কারণে উদ্বোধন পেছাতে পারে। ধারণা করা যাচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে শেষ দিকে কিংবা মার্চের শুরুতে চালু হতে পারে এই বর্ডার হাট।

হাটে ব্যাবস্থাপনা কমিটি থাকবে: সীমান্ত হাটের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কাস্টমস বিভাগ, ব্যাংক কর্মকর্তা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন।

হাটে প্রবেশ করতে টিকিট নিতে হবে : হাটে প্রবেশ করতে গেলে উপজেলা প্রশাসন বা হাট প্রাঙ্গণ থেকে একটি টিকিট কাটতে হবে। এটি কাটতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দেখাতে হবে। টিকিট ছাড়া হাটে প্রবেশ করা যাবে না। বিক্রেতাদের ৫০ রুপি এবং ক্রেতাদের ২০ রুপি প্রদান করতে হবে। কেনাবেচা করতে গেলে উভয় দেশেরই ক্রেতা-বিক্রেতার পরিচয়পত্র থাকতে হবে।

হাটে কি কি পণ্য বেচাকেনা করা হবে: সীমান্ত কৃষি ও হালকা শিল্পপণ্য বিক্রি হয়। এর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত ফলমূল, শাকসবজি, মসলা, বনজ সম্পদ, কুটিরশিল্প, কৃষিজাত যন্ত্রপাতি, তৈরি পোশাক, প্রসাধনসামগ্রী, গৃহস্থালির পণ্য ইত্যাদি বেচাকেনা করা যাবে।

একজন ক্রেতা ২০০ ডলার সমমূল্যের পণ্য ক্রয় করতে পারবে : হাটে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২০০ ডলার বা এর সমপরিমাণ ১৬ হাজার ৮০০ টাকার পণ্য কিনতে পারবেন। হাটে দুই দেশের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশের মুদ্রা নিয়ে আসতে পারবেন। হাটে দুই ধরনের মুদ্রায়ই চলবে। তবে বেচাকেনা শেষে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় মুদ্রাবিনিময় করে নিতে পারবেন। হাটে প্রবেশে বা বেচাকেনা করতে কারও কোনো ভিসা ও পাসপোর্ট লাগবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর একটি হোটেলে দুইদিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের ভোলাগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সায়দাবাদ ও মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি পাহাড় সংলগ্ন লাউড়েরগড়ে নতুন ৬টি সীমান্ত হাট চালুর সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ওই বছরেই শেষ হয়েছিল হাটের নির্মাণ কাজ। সে সময় দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে যান। তখন বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে উদ্বোধন পিছিয়ে যায়।

এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই বর্ডার হাট উদ্বোধনের কথা ছিল। তখনো করোনাভাইরাসের কারণে বর্ডার হাট চালুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৪৮/১২ এস এবং ১১ এস পিলারের কাছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর এলাকা এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস এলাকায় সিলং সাব ডিভিসনের সূরার সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জ এলাকার দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গায় সীমান্ত হাট নির্মাণ করা হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহে দুইদিন বেলা ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই হাটে বেচাকেনা করা যাবে। সীমান্ত হাটে ভারত ও বাংলাদেশের দুইদিকে দুটি ফটক থাকবে। ব্যবসায়ীদের জন্যে প্রতি হাটে ৫০ রুপি ও ক্রেতাদের জন্যে ২০ রুপি অর্থ ধার্য্য করা হতে পারে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ডার হাটে বিদ্যমান ৫০টি দোকানের মধ্যে বাংলাদেশের ২৪টি দোকান থাকবে। আর ভারতের থাকবে ২৬টি দোকান। দোকান কোঠাগুলো এরই মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্তাকর্তা লুসিকান্ত হাজং বার্তা বাজার প্রতিবেদককে বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছি ডিসেম্বরের মধ্যেই যেন হাটটি চালু হয়। তবে এ বছর হাট খোলার নিশ্চয়তা দেয়নি তারা। খুব সম্ভব আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসে চালু হতে পারে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামিম আহমদ শামিম বার্তা বাজার প্রতিবেদককে বলেন, ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। করোনা ও দুই দেশের বিভিন্ন সমস্যার কারণে হাট চালু সম্ভব হয়ে উঠেনি। হাট চালু হলে দুই দেশের সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হবে। দ্রুত বর্ডার হাটটি চালু হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবে সেই সাথে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাবে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর