প্রয়োজনে কিছু ত্যাগ করে হলেও বাংলাদেশ-ভারতের মৈত্রী ধরে রাখতে হবে: ডেপুটি স্পিকার

ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, প্রয়োজনে নিজেদের কিছু ত্যাগ করে হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, দুই দেশের নাগরিক এবং সরকারকে বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে সম্পর্কের নার্সিং করতে হবে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা গ্যালারি মিলনায়তনে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস উপলক্ষে মিট দ্যা সোসাইটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক রক্ত দিয়ে গড়া। আমাদের মধ্যকার এই সম্পর্কে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চ্যালেঞ্জ আসবে। আমাদের দেশে যেমন চ্যালেঞ্জ আসবে, তেমনি তাদের দেশেও চ্যালেঞ্জ আসবে। আমাদের বন্ধুত্ব যেন নষ্ট না হয় সেজন্য নিজেদের কিছু ত্যাগ করে হলেও এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, রাজনৈতিক দিক দিয়ে এ উপমহাদেশে টিকে থাকতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। আর এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে, আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে, বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং অর্থনীতির বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছাড়া কিন্তু আমাদের কোনো পথ নেই।

একটি চক্র দুদেশের সম্পর্কের বিরোধীতায় এখনও সক্রিয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নষ্ট করতে বিভিন্ন কাজ চলছে। বিরোধীতাও আছে। একটা চক্র আছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল রাজাকার-আলবদর-আল শামস এবং জামায়েতে ইসলাম। এখনও তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়নি। এখনও তাদের অস্তিত্ব আমরা টের পাই।

শামসুল হক টুকু বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে; যারা ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিল। সেই শক্তিকে আমরা এখনও দেখতে পাই। আমরা এই শক্তিকে নিস্তেজ-নিঃশেষ করতে হলে আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতিকে একটা স্বচ্ছতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ শক্তি তৈরি করা দরকার।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ডেপুটি স্পিকার। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি বলেন, আমি যদি আশ্রয় ও ট্রেনিং না পেতাম, তাহলে তো আমি এদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে পারতাম না।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, ৫১ বছর আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। সেটা ছিল বন্ধুত্বের যাত্রা। আমাদের মধ্যে এখন বহুমুখী সম্পর্ক। আবেগ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এটি শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে নয়, বিশ্বজুড়ে আমাদের অংশীদারিত্ব অনন্য।

অনুষ্ঠানে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সরকারের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। ত্রিপুরায় জনসংখ্যার চেয়েও সেখানে বাংলাদেশি শরণার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। ভারত আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা করেছে।

লে কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, আমি দুই দেশের যোদ্ধাদের রক্ত দেখেছি। ভারতীয় সেনাদের রক্ত আমাদের মতোই। আমি সব সময় বলি, ভারতীয় সেনাদের রক্ত সব সময়ই পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা দিয়েই প্রবাহিত হবে। এটা আমাদের জমিকে উর্বর করবে, আমাদের বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ৭১ এর চেতনাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, একটা রক্তাক্ত ইতিহাস সেটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জীবন্ত রাখা খুব মুশকিল। ভারতেও সেটা হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের পক্ষে বিপ্লবের স্মৃতি রক্ষা করা কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর