পীরগঞ্জে সুপ্রীম সীডস্ এর বীজ ধান কিনে প্রতারিত কৃষক!

সুপ্রীম সীডস্ কোম্পানীর বীজ ধান কিনে একাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার খালাশপীর হাটে প্রতারণার শিকার এক কৃষককে ওই কোম্পানি ক্ষতিপুরণও দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সুত্রে জানা গেছে, আসন্ন ইরি-বোরো মওসুমের জন্য কৃষকেরা বীজতলা তৈরি করতে বিভিন্ন জাতের ধান বীজ খোলা বাজারে ক্রয় করছেন। ক্রয়কৃত হাইব্রিড বীজ ধান ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর বীজ গজালে সেগুলো বীজতলায় ফেলতে হয়। এরপর সর্বোচ্চ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বীজতলায় চারা গজায়। কিন্তু সুপ্রীম সীডস্ কোম্পানির হিরা-২ জাতের ধানের বীজ গজায়নি। উল্টো তা পঁচে গেছে। কয়েকদিন আগে উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের জয়নন্দনপুরের শফিকুল ইসলাম ওই কোম্পানির হিরা-২ জাতের ১ কেজি ওজনের ৬ প্যাকেট, রামকানাইপুরের জব্বার মিয়ার ছেলে দেলদার হোসেন ৩ প্যাকেট এবং মদনখালী ইউনিয়নের থিরারপাড়ার আব্দুস সালাম মিয়া ৮ প্যাকেট বীজ ধান ক্রয় করেন। প্রতিটি প্যাকেটের মুল্য প্রায় সাড়ে ৩’শ টাকা করে বলে জানা গেছে। ওই কৃষকরা যথাযথ প্রক্রিয়ার পর বীজতলায় ধান ফেললেও ৪/৫ দিনেও বীজ না গজিয়ে পঁচে গেছে। কৃষক শফিকুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার বিকেলে সীডস্ কোম্পানিটির টেরিটোরি ম্যানেজার এবং ডিলার নুরুল হাকিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়ে ওই কৃষককে ক্ষতিপুরন হিসেবে ৩ প্যাকেট হিরা-২ ধান বীজ দেয়া হয়।

সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীর হাট, শানেরহাট, পীরগঞ্জ সদর সদর এবং চতরা হাটে ৪ জন ডিলার সুপ্রীম সীডস্ এর বীজ ধান বিক্রি করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানেও ওই বীজ বিক্রি করা হচ্ছে। সেইসাথে উপজেলায় বিভিন্ন কোম্পানির ধান বীজে সয়লাব হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রামকানাইপুরের দেলদার হোসেন বলেন, আমার ইচ্ছে হচ্ছে নিজের টাকায় একটা মাইক ভাড়া নিয়ে কৃষকদেরকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষায় খালাশপীর হাটে সুপ্রীম সীডস্ এর বিরুদ্ধে প্রচার করি। এভাবে আমার আবাদ নস্ট করায় অনেক টাকা ও সময় ক্ষতি হয়েছে। অপর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছি। আর এবারে হিরা-২ জাতের ধান বীজ গাজি (চারা গজায়নি) হলো না। আমার মত আরও দু’জন কৃষকের হিরা-২ ধান গাজি হয়নি। এভাবে কৃষকের ক্ষতি করা ঠিক হয়নি। তিনি আরও বলেন, সুপ্রীম সীডস্ কোম্পানির লোকজন এসে ক্ষতিপুরন হিসেবে আমাকে ১ কেজি ওজনের ৩ টি বীজ ধানের প্যাকেট দিয়ে বলেছে এ কথা যেন কাউকে না বলি।

বীজ কোম্পানিটির টেরিটোরি ম্যানেজার মাহবুব খান বলেন, বীজে এ রকম সমস্যা হলে আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে কৃষককে সমাধান দিয়ে থাকি। কৃষক শফিকুল ইসলাম কে আমরা ১ কেজি ওজনের ৩ টি বীজ ধানের প্যাকেট দিয়েছি। অপর দু’কৃষকদের ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলেননি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ মওসুমে রংপুরের পীরগঞ্জ এবং মিঠাপুকুর উপজেলায় সুপ্রীম সীডস্ এর প্রায় ৫০ মে. টন বীজ ধান বিক্রি করা হবে।

সুপ্রীম সীডস্ এর রংপুরের জোনাল ম্যানেজার তৌহিদ হোসেন বলেন, সমস্যাটা শোনার পরই খালাশপীরের ডিলার এবং আমাদের টেরিটোরি ম্যানেজার মাহবুব খানকে ওই কৃষকের বাড়ীত পাঠিয়েছি। সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বীজ ধান যদি ১২ ঘন্টার বেশি সময় পানিতে ভেজানো হয়, তবে তা পঁচে যায়।

খোলা বাজারে নিম্নমানের বীজ বিক্রির কথা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কোন সমস্যা সৃষ্টি বা অভিযোগ পেলে আমি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিবো।

আনজারুল/বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর