মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা হাফিজউদ্দিন

শাহ্ এ কে এম হাফিজউদ্দিন। তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল (তর্জনী) ও বাম কানের লতির উপরের দিকে স্প্লিন্টার দ্বারা প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। শত্রুর গ্রেনেডের সেই ক্ষতচিহ্নই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে তার।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পবনবেগ গ্রামে তার বাড়ি। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান তিনি।

সুযোগ পেলেই শিশু-কিশোরদের ডেকে তার যুদ্ধকালীন ঘটনা বলেন। দেশ স্বাধীনের বীরত্বগাঁথার ইতিহাস বলেন। যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনা শোনান। যুদ্ধাহত এ মুক্তিযোদ্ধার লক্ষ্য বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো। যাতে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে বড় হয় তার এলাকার বাচ্চারা।

হাফিজউদ্দিন ৮ নং সেক্টর কমান্ড অধীন বিহার (ভারত) চাকুলিয়া ট্রেনিংপ্রাপ্ত। ট্রেনিংয়ের সময় তার সততা, সুদক্ষতা ও বীরত্বের জন্য ‘উইং লিডার’ উপাধিপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে ৮ নং সেক্টর কমান্ড কর্তৃক ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ডেপুটি থানা কমান্ডার পদে নিয়োজিত থেকে বীরত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ডেপুটি সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসাবে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বায়তুল আমান মিলিশিয়া ক্যাম্পে নিয়োজিত হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

হাফিজউদ্দিন তার সাথী মুক্তিবাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ঘোড়াখালী রেলওয়ে ব্রীজ বিধস্ত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভিন্ন সময় ৮ নং সেক্টর কমান্ডার ও সাব-সেক্টর কমান্ডারদের সাথে বোয়ালমারী থানা, আলফাডাঙ্গা থানা, মোহাম্মদপুর থানা, কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়া তার সাথী বীরদের নিয়ে পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেন।

১৯৭১ সালের ১৩ই আগস্ট বীর সাথীদের নিয়ে আলফাডাঙ্গা থানা আক্রমণ করেন এবং ১৪ই আগস্ট ভোরে আলফাডাঙ্গা থানাতে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

এরপর ১৫ আগস্ট ভোর ৪টার দিকে ১০-১২জন সাথী নিয়ে আগ্নেয় অস্ত্র ও লোকবল আনার জন্য ভারত অভিমুখে যাত্রা করেন। ওই দিন রাত ৯-১০টার মধ্যে যশোরের কালীগঞ্জ থানার বারো বাজার রেলক্রসিংয়ের সময় রাতের আঁধারে শত্রু পক্ষ বোমা ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং বিকট শব্দ হয়। এসময় কমান্ডার শাহ্ এ কে এম হাফিজউদ্দিন আঘাতপ্রাপ্ত হন ও প্রচুর রক্তপাত হয়। পরে তার সঙ্গীরা তাকে নিয়ে ভারতের কল্যানী ক্যাম্পে ডাক্তার আফতাব উদ্দীনের নিকট চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হাফিজউদ্দীন ও তার বাহিনী এক কেজি আড়াইশো গ্রাম স্বর্ণ, প্রায় আট হাজার টাকা ও প্রাইজ বন্ডসহ শত্রু পক্ষ থেকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বশস্ত্র বাহিনীর (আর্মি) অফিসার, সাব-সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডারের নিকট জমা দেন।

শাহ্ এ কে এম হাফিজউদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়েরা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এসব নিয়ে জানতে চায় না। তারা মোবাইলের গেমস নিয়ে ব্যস্ত। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে তাদের। আমি সুযোগ পেলেই আমার এলাকার শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি। আমার অভিজ্ঞতা বলি। যাতে করে এখনকার প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে বর্তমান প্রজন্ম যেন বেড়ে উঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের যেন স্মরণ করতে পারে এ প্রজন্ম। তাদের প্রতি যেন শ্রদ্ধাবোধ জাগে। এ বোধ থেকেই নিজের গ্রামের স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রায়ই মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ এ কে এম হাফিজউদ্দিন।

মিয়া রাকিবুল/বার্তাবাজার/জে আই

 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর