মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে আবাসিক ভবন নির্মাণের অভিযোগ

পাবনা মধ্য শহরে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী বারোয়ারী মা মন্দিরের উপরে আবাসিক ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে মন্দির কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই শতবর্ষের মন্দিরের উপরে বসবাসের জন্য দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নিয়মনীতি ও পবিত্রতা নষ্টের সামিল বলে মনে করছেন সাধারণ হিন্দু ভক্তবৃন্দ। বর্তমান মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যোগসাজসে সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে নির্মাণ করা হচ্ছে এই দ্বিতল আবাসিক ভবন।

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই মন্দির কমিটির সাধারণ সদস্য ও ভক্তবৃন্দরা মৌখিকভাবে বিষয়টি সভাপতি সম্পাদককে অবগত করার পরেও তারা কোন কর্ণপাত করছেন না। তবে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে তার উপরে আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক একাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, এটি একটি অন্যায় কাজ। এতে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হবে। এখানে আর কেউ পূজা করতে আসবেনা। এটি একটি মন্দিরকে নষ্ট করা বা সেটি দখল করার চক্রান্ত। কারন পাবনাতে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি মন্দিরের জায়গা কৌশলে দখল করে সেটি নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়ে বেঁচা বিক্রি হয়েছে। মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাত করছে একটি চক্র। সেই সকল বিষয়ে কোন প্রতিবাদ না হওয়ার সুযোগে শহরের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দির এখন দখলের পক্রিয়া চলছে। এটি কখনো মেনে নেয়া যায়না। জেলা প্রশাসন বিষয়টি অবশ্যই নজরে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অভিযোগের অলোকে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে কাজের দেখভাল করছিলেন মিন্দিরের দীর্ঘ ১৪ বছরের দায়িত্বরত সভাপতি উত্তম কুমার জুয়াদ্দার। মন্দিরের উপরে আবাসিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কমিটির সর্বসম্মতি ক্রমে করা হচ্ছে। মন্দিরের রক্ষানাবেক্ষন ও পূজার কাজের সহযোগিতার জন্য এটি দরকার। এই আবাসিক ভবন নির্মাণের ফলে এখানে মন্দিরের আয়ের একটি উৎস হবে। মন্দিরের উপরে ভবন নির্মানণ করা হলে মন্দিরের কোন ক্ষতি হয়না। আর এই ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। নিজেদের অর্থ আর কিছু বাহিরের সহযোগিতা নিয়ে এই কাজ চলছে। পূজার সময় ভক্তবৃন্দের জন্য যে রান্না করা হয় রন্ধন সামগ্রী রাখার জায়গা নেই, সেই কারনেও এটি করা। এই মিন্দিরের উপরে একটি পরিবার থাকলে সময়মত সকল পূজার কাজ ভালো ভাবে করা যাবে। এতে সমস্যার হওয়ার কথা না।

এদিকে মন্দিরের উপরে আবাসিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের প্রচার সম্পাদক প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, এটি চরম একটি অন্যায় কাজ। ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট করে করা হচ্ছে। এই বিষয়ে ইতমধ্যে স্থানীয় সকল হিন্দু সম্প্রদায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সারা বাংলাদেশ ঘুরে আপনি একটি মন্দিরেও এমন চিত্র পাবেন না। এটি একমাত্র পাবনাতেই সম্ভব। কারণ এরই মধ্য শহরে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি মন্দিরের জায়গা দখল করে বহুতল ভবনসহ ব্যবসায়ীক দোকান ঘর নির্মাণ করে সেটি বিক্রি করা হয়েছে। মন্দিরের রক্ষকরা এখন ভক্ষক সেজেছেন। এমনকি সার্বজনীন মন্দিরকে ব্যক্তিগত বলে দখল করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করছেন। বর্তমান সময়ে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই সকল মিন্দরের কার্যক্রম। কথা বলার বা প্রতিবাদ করা মানুষদের ম্যানেজ করে চলছে হড়িলুট। তবে অবশ্যই আমরা যারা সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছি তার তিব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এই কাজের। আর এই বিষয়ে অবশ্যই প্রশাসনসহ দায়িত্বরত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা সমস্যার সামাধানে এগিয়ে আসবেন।

পাবনা জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের দায়িত্বরত প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় ভুষন রায় বলেন, একটি চক্র কৌশলে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে নষ্ট করে মন্দিরের জায়গা দখল করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি মধ্য শহরের একটি শতবর্ষের মন্দিরের জায়গা দখল করে তার উপরে ভবন নির্মাণ করছে। এতে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। সেখানে মানুষ বসবাস করলে ওই মন্দিরের পূজার কাজ হবে না। সেখানে নারী থাকবে টয়লেট স্থাপন করা হবে। কিভাবে এই কাজটি করছে এটি বুঝে উঠতে পারছিনা। জেলার দায়িত্বরত সকল হিন্দু নেতাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া যে সকল মন্দিরের জায়গা দখল করে আবাসিক ভবন ও ব্যবসায়িক দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেই সকল বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ছাড়া এক সময় সকল মন্দির হুমকির মুখে পরবে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বলেন, নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছি। সকলের সাথে এখনো তেমন পরিচয় হয়নি। মন্দির সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবু আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। অবশ্যই খোঁজ নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর