তেঁতুলিয়ায় নিয়োগ বাণিজ্যের পর সভাপতি-সুপার উধাও, ভুক্তভোগীর আমরণ অনশন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় নিয়োগ বানিজ্যর ঘটনায় পাওয়া টাকা আদায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল, সুপার ও সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে মাদ্রাসায় তালা লাগিয়ে আমরণ অনশন করতেছেন ভুক্তভোগী পরিবারবর্গ।

গত রবিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি বালাবাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় অফিস কক্ষের সামনে অবস্থানে রয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারবর্গ।

জানা যায়, চলতি বছরের (১২ জুন) দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ৫ মাস পর গত (২৬ নভেম্বর) রোজ শনিবার সকাল ১১টায় ওই উপজেলা শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিক্ষার দিন তারিখ ধার্য্য করা হয়। সকাল ১১টায় পরীক্ষার সময় থাকলেও বিকাল আনুমানিক ৩টার দিকে পরীক্ষা বসান। দীর্ঘ ৫ মাসের ব্যবধানে কমপক্ষে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সভাপতি- সুপার মিলে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একটি পরিবার সবার সামনে মুখ খূললেও আরো অনেক পরিবার অঘচরে রয়েছেন। এক গরিব অসহায় ভুক্তভোগী পরিবারকে সভাপতি আমিন আলী ও মাদ্রাসার সুপার বদরুল আলম সরকার মিলে অবৈধভাবে প্রলোভন দেখিয়ে নৈশ্য প্রহরী পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সভাপতি ও সুপার মিলে সভাপতির ভাতিজাকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নৈশ্য প্রহরী পদে নিয়োগ দেন।

শুধু তাই নয় আয়া পদে ব্যাপক অনিয়ম করিয়েছেন সভাপতি ও সুপার। আয়া পদে মোট ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা সুপার- সভাপতির দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবী করেন। গত রবিবার থেকে অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছেন, প্রশাসনিকভাবে সুপার- সভাপতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সুপার ও সভাপতি মিলে নিয়োগ বানিজ্য করার কারণে এলাকার ব্যক্তির ভয়ে মাদ্রাসায় আসেননি ৫ দিন থেকে। মাদ্রাসার সুপার মাদ্রাসায় না আসায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ৫ দিন থেকে মাদ্রাসায় অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ দেখতে পায়। শত শত বার ফোন করার পরেও কোন ফোন ধরেনি সুপার ও সভাপতি।

স্থানীয়রা জানায়, নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে স্থানীয় জমি দাতার নাতী মো: সুয়েল রানা নামের এক চাকুরী প্রার্থীর কাছ থেকে দফায় দফায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয় মাদ্রাসাটির সুপারিনটেনডেন্ট মো: বদরুল আলম সরকার মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিন আলী। শূন্য নৈশ্য প্রহরী পদে সুয়েল রানাকে নিয়োগ না দিয়ে সভাপতির ভাতিজাকে নিয়োগ দেয়ায়, ঘুষের টাকা আদায় ও নিয়োগ বাতিল করার জন্য ভুক্তভোগী পরিবার রোববার সকাল থেকে আজ পর্যন্ত মাদ্রাসাটির অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে অনিদিষ্টকালের আমরণ অণশন শুরু করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার শিলাইকুঠি এলাকায় ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভুক্তভোগী তোফাজ্জল হোসেন জানান, করোনাকালীন সময়ে সুপার বদরুল আলম সরকার ও সভাপতি আমার ছেলেকে চাকুরি দিবে মর্মে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে যৌতুকসহ এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫০ হাজার নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সুয়েল রানা বাদী হয়ে রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মাদ্রাসার সহ- সুপারিনন্টেডেন্ট ওসমান গণি জানান, মাদ্রাসায় আলোচনা হয়েছে নিয়োগ দিয়ে যা ডোনেশন আসবে সেটা দিয়ে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হবে। এখন শুনছি নিয়োগের টাকা সুপার সভাপতিসহ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। সুপারিনটেনডেন্ট বদরুল আলম সরকার প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্য করেছে। স্থানীয়দের ভয়ে মাদ্রাসায় আসেনি। মুঠোফোনে শত শত বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসময় সভাপতি আমিন আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শওকত আলী জানান, বিষয়টি শুনেছি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর