চাকরি হারানোর আতঙ্কে সিটি ব্যাংকের কর্মীরা

দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের কর্মীরা চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বেসরকারি ব্যাংকটির ৪২ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে জোরপূর্বক অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষের দাবি, যৌক্তিক কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ব্যাংকটির চাকরি হারানো কর্মীরা এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এসকল বিষয় দেখে। এছাড়া বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর কোনো নোটিশ ছাড়াই মানবসম্পদ বিভাগ এসব কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে পারফর্ম্যান্স ইস্যুতে জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে সই করিয়ে নেয়। এসময় টার্মিনেশন করার ভয় দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে পদত্যাগ পত্র লেখানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো উপায় না পেয়ে কর্মকর্তারা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কথা মত স্বাক্ষর করেন।

সূত্র আরও জানায়, চাকরি হারানো এসব কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে ব্যবসায়ের টার্গেট ২৮ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ লাখ ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩টি ক্রেডিট কার্ড যুক্ত করা হয়। কোনো মাসে টার্গেট পূরণ করতে না পারলে তা পরের মাসে পূরণ করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল মাসে টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হয় না। কোনো মাসে টার্গেট পূরণ না হলেই তত্ত্বাবধায়ক ও টিম ম্যানেজারের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে কাউন্সেলিং পত্রে সই করিয়ে নেওয়া হতো।

জানা যায়, বর্তমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে জোর করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া এসব কর্মকর্তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিটি ব্যাংক থেকে সম্প্রতি চাকরি হারানোরা বেশির ভাগই ছিলেন ব্যাংকের স্থায়ী কর্মী। করোনাকালীন সময়ে সিটি ব্যাংক কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেনি, কাউকে টার্গেট পুরণের জন্য চাপও দেয়নি। কিন্তু এই ৪০ জন দীর্ঘ নয় মাসে কোনো টার্গেট পূরণ করতে পারেননি। যদিও তাদের অধিকাংশ সহকর্মী প্রায় ৮০ শতাংশ টার্গেট পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। যেসব কর্মী টার্গেট পুরণ করতে পারেননি, তাদেরকে মাসের পর মাস টেনিং করিয়েছি। তারপরও তাদের মানের কোনো উন্নতি হয়নি। ব্যাংকে এসে চা-নাস্তা খেয়ে তারা চলে যেতেন। তাদের প্রত্যেককে মাসিক ৩৯ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো। তারপরও ব্যাংক প্রত্যেককে ৯ মাস সময় দিয়েছে কিন্তু তাতেও ওই কর্মীদের কোনো মানোন্নয়ন হয়নি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের চাকরি ছাড়তে বলা হয়েছে, কাউকে জোর জবরদস্তি করা হয়নি।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলারের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেছিলেন, ‘তারা ভেবেছিলেন অযোগ্য, অদক্ষদেরও পদোন্নতি দিতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে শুধু আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে কাউকে চাকরিচ্যুত বা পদোন্নতি বঞ্চিত করা যাবে না। আর বেতন-ভাতার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভেবে দেখবে বলে জানিয়েছিল।

করোনার মধ্যেও বিভিন্ন সময় ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরি হারাতে দেখা গেছে। সে সময় কিছু সংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও করোনার সময়ে শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে চাকরিচ্যুত ও চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়নি। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপন্থী ছিলো।

করোনায় ব্যাংক কর্মীদের ছাঁটাই বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না বলে জানায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। একইসঙ্গে করোনার সময়ে চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংক কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব নির্দেশনা সঠিকভাবে মানছে না অনেক ব্যাংক। চাকরিতে পুনর্বহাল করার বিপরীতে নতুন করে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুতি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হওয়া দরকার বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা।

বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর