ফরিদপুরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা, পুলিশসহ আহত ১৪

ফরিদপুরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য ও বিএনপির ৯ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়ক সংলগ্ন প্রেসক্লাব চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।

তবে পুলিশ বলছে, বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষের বিরোধে এক পক্ষের হামলায় সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে। হামলা ঠেকাতে পুলিশ শর্টগানের ১১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।

‘পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে’এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ফরিদপুর মহানগর শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম আব্দুল কাইউম।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল যথাক্রমে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সমাবেশ উপলক্ষে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে ছোট আকারের একটি মঞ্চ করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তখনো ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছাননি। ওই সময় মঞ্চে অন্যান্যদের মধ্যে বসা ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া।

স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান কায়েস, মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ। এরপর বক্তব্য দিতে শুরু করেন জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুর রহামান। তিনি বক্তব্য শুরু করলে বিকেল ৩টা ৫৪ মিনিটের দিকে হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা অনুমানিক ৩০/৩৫ জন তরুণ লাঠি ও ইট নিয়ে সভাস্থলে হামলা করেন। হামলাকারীরা ব্যানার ছিনেয়ে নেন ও চেয়ার ভাঙচুর করেন। এ সময় হামলাকারীরা তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। হামলাকারীদের অনেকের পরনে কালো গেঞ্জি ও মাথায় লাল রঙের হেলমেট ছিল। পরে পুলিশ হামলাকারীদের হটিয়ে দেন। ওই সময় পুলিশ শর্টগানের ১১টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে।

হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও মহানগর বিএনপির ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম আব্দুল কাইউম বক্তব্য দেন।

এরপর বিএনপির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন, আফজল হোসেন খান, খন্দকার ফজলুল হক, মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজির আহমেদ কিছু সমর্থক নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।

ওই সময় পুলিশ সিজান নামে ছাত্রদলের এক কর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। এ আটককে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ধস্তাধস্তি হয়। বিকেল ৪টা ৪১ মিনিটের দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ঘটনাস্থলে আসেন।

শামা ওবায়েদ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, পুলিশের গুলিতে এ পর্যন্ত বিএনপির ১১জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। তার প্রতিবাদে গত চার দিন আগে আমরা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছি। পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এ হামলা করেছে। তারা পুলিশের সামনে গুলি করে ককটেল ফাটিয়েছে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গ্রেপ্তার করা অনেককে। তারা ককটেল রাজনীতি শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা দেখেছি তারা বিভিন্ন জায়গায় ককটেল রেখে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ তারা ফরিদপুরে প্রেসক্লাবে ককটেল ফাটিয়ে আমাদের লোকদের ধরছে।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এখানে আজ আমাদের যে সমাবেশ ছিল সেটা ছিল সাধারণ মানুষের ওপরে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপরে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে। ১১ জন নেতা মারা গেছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ ছোট সমাবেশ করতে এসে আমরা হামলার শিকার হলাম।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া বলেন, হামলায় দিলিপসহ তাদের অন্তত ৯ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ রিতু, কামাল, রাজীব ও সিজানসহ বেশ কয়েকজন তরুণ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, ফরিদপুর বিএনপি শামা ওবায়েদ ও নায়াব ইউসুফ এই দুই ভাগে বিভক্ত। তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ থেকে সভাস্থলে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের ৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ১১টি শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অভিযোগের বিষয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এসব বিষয়ে কিছু জানেন না।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর