“দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ” এসআই আব্দুল আজিজ

বিভিন্ন ভাবে মানবিক কাজ করছেন এসএমপি’র এয়ারপোর্ট থানার “দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ” এসআই আব্দুল আজিজ। তার মানবিক কাজে উপকৃত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত থেকে হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। একজন পুলিশ হয়েও অতি সাধারণ ও অমায়িক ব্যবহারে তিনি হয়ে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে আপনজন হিসেবে। মানুষ মানুষের জন্য – এই ধারণাকে ছড়িয়ে দিতেই মানবিক কাজ করছেন এসআই মো: আব্দুল আজিজ।

কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনের দায়িত্বের পাশাপাশি করে যাচ্ছেন মানবিক কাজ । সাধ্যমতো অসহায়,অস্বচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিত তথা বিপদেপড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন তিনি। শুরুর গল্প ছিলো আশপাশ অসহায় মানুষের দুঃখ দুর্দশা আব্দুল আজিজকে পীড়া দিতো। সেই পীড়া থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানসিক প্রশান্তি পান তিনি। এখন সেই সকল মানবিক কাজে আব্দুল আজিজ এর পাশে রয়েছে তার ডিপার্টমেন্ট,ব্যাচমেটসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর আউট সাইড ক্যাডেট হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে যোগদান করেন আব্দুল আজিজ । পুলিশ যোগদানের আগে পেশায় তিনি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা,ব্যাচমেট,ফেসবুক ফ্রেন্ডস এখন এসব মানবিক কাজে আব্দুল আজিজকে আর্থিক অনুদান ও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। আর তা দিয়ে কারও খাবারের ব্যবস্থা করছেন,কারও জন্য অস্বচ্ছল পরিবারের উপযুক্ত মেয়েদের বিয়ের খরচ শিক্ষার্থী স্কুল ও কলেজমুখী হয়েছে। একজন অভিভাবক জানান,আমার পরিবার চলেনা,পরিবারের সদস্য বেশী,সে অনুযায়ী উপার্জনক্ষম লোক নেই।আমাদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। পড়ার খরচ সামলানো মুসকিল। তাই আমার মেয়ে ও ছেলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই।ছেলেকে একটি ওয়ার্কশপে কাজে লাগিয়ে দেই। কিন্তু দারোগা সাব কীভাবে এই সংবাদ শুনে সন্ধ্যা বেলা আমাদের বাড়ীতে হাজির হন। তিনি আমাদের ছেলেকে বুঝিয়ে স্কুলে নিয়ে গেছেন। তিনি গাইড বই কিনে দিয়েছেন, স্কুলের বেতন ও দিচ্ছেন। আমার সন্তানরা এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।এভাবে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের অদৃশ্য অভিভাবক হচ্ছেন ‘দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ’ আবদুল আজিজ।

খাদ্য সামগ্রী বিতরণ আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, এবার ভয়াবহ বন্যা ও করোনায় সিলেট সদরের ক্ষতিগ্রস্হ অসংখ্য পরিবারকে বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ বিতরণ করেছি।দুর্যোগ, দুর্ভোগ ও সকল সংকটে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের পাশে থাকার।

উপকারভোগী একজন ব্যক্তি জানান, এবার বন্যায় সাহেবের বাজারের আলীনগর ও মটরঘাট গ্রামে অধিকাংশ অস্বচ্ছল মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী।নুন আন্তে পান্তা ফুরায় এমন অজস্র পরিবারের খাদ্য যোগানোসহ নিয়মিত খুঁজ খবর রেখেছেন এসআই আব্দুল আজিজ।

ফ্রি চিকিৎসা সহায়তা:কিছুদিন আগে ব্যবস্থা করেছেন ফ্রি চিকিৎসা সেবার। সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের ছোট্ট একটি নিষ্পাপ শিশু প্রিয়ঙ্কর ।জন্মের পর হতে দুরারোগ্য হানিয়া রোগে ভুগছিল সে। শিশুটি সেজন্য হাঁটতে পারতো না।দাঁড়াতে পারতো না।পারিবারিক আর্থিক দৈন্যদশা থাকায় শিশুটি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলো। আব্দুল আজিজ বন্যা দুর্গতদের খাদ্য বিতরণ করতে গিয়ে তার সন্ধান পান। এরপর নিজ দায়িত্ব সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসক দেখিয়ে অপারেশন করে সুস্থ করে তুলেন প্রিয়ঙ্করকে। এমন মানবিক সেবার বেশ কিছু নজির রয়েছে তার।

কর্ম পরিধি: আব্দুল আজিজ এর এমন মানবিক কাজ প্রচার বিমুখ হলেও মুখে মুখে তার মহৎ কাজগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ তাদের দুঃখ কষ্টের কথা তার সাথে শেয়ার করছেন। আব্দুল আজিজ জানান,করোনা কালে যখন মানুষজন ভয়ে ঘর থেকে বের হতে সাহস পায়নি তখনো অনায়াসে করোনা রোগীদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সভাসদ পৌঁছে দিয়েছি। সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। করোনা কালে নিম্ন আয়ের মানুষ হতে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত আচমকা অসুবিধায় পড়ছিলেন।মধ্যবিত্তের কেউ কেউ লজ্জায় জনসম্মুখে খাদ্য সহায়তা নিতে চাননি। আমি নিম্ন আয়ের মানুষ হতে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছি। আনুমানিক সহস্রাধিক পরিবার এইসব সহযোগিতা পেয়েছেন। এছাড়া বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সাহেবের বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ডজনখানেক আশ্রয় কেন্দ্রে সহস্রাধিক পরিবারকে নিজের এবং অন্যদের সহযোগিতায় খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। দিন দিন ‘দ্য ওয়ানম্যান পুলিশ’ এসআই আব্দুল আজিজ এর এসব মানবিক কাজের পরিসর আরো বিস্তৃত হচ্ছে। এখনো অনেকে অর্থ সংকটের কারণে মেয়ের বিয়ে খরচ সংকুলান করতে পারছেন না বলে সহযোগিতা চান। অনেকে ছেলে মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে চান, অনেকে চিকিৎসার অভাবে ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন বলে সহযোগিতা চান। আমরা তা থেকে ফিরিয়ে এনে তাদের সাধ্যমতো সেবা দেই। দিন দিন মানুষ সেবা নিতে ছুটে আসছে।

সাইফুল/বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর