কুবি শিক্ষক সমিতির নন্দী-মোকাদ্দেস কমিটির প্রতি অনাস্থা শতাধিক শিক্ষকের

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২২ এর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রেরিত ১০৬ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে এই অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়াও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদও শিক্ষক সমিতির এই কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে।

‘সচেতন শিক্ষকবৃন্দ’ নিবেদিত এই পত্রে বলা হয়, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং শিক্ষকদের মতামতের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে তড়িঘড়ি করে তারিখ ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক সমাজ বিস্মিত ও হতবাক। আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ মনে করি, কাউকে কোনো রকম প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আয়োজনের এমন ঘোষণা উদ্দেশ্যমূলক ও শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী।

অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের এই তারিখ ঘোষণা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১০ অনুচ্ছেদের (খ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধারায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না এমন তিনজনের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। অথচ চলতি বছর কারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, সেই ব্যাপারে জানতে চেয়ে বর্তমান শিক্ষক সমিতি কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সাধারণ শিক্ষকদের অবহিত করেনি। বরং গোপন বৈঠকের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনপূর্বক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও গঠনতন্ত্রের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত ১০টি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ১০ ডিসেম্বর এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি জানুয়ারি মাসেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মনোনীত দুইজন সাধারণ সদস্য সমিতির হিসাব বিবরণী নিরীক্ষণ করবেন। পরীক্ষিত হিসাব বিবরণী কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক বিবেচিত এবং অনুমোদিত হবার পর সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় তা পেশ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষক সমিতি হিসাব বিবরণী নিরীক্ষণ কমিটি গঠন ও সাধারণ সভা আয়োজন না করেই গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কক্সবাজারে যে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে আয়- ব্যয়ের ব্যাপারে শিক্ষকমহলে ইতোমধ্যে বিতর্ক ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি দুলাল চন্দ্ৰ নন্দীর বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল এবং এ অভিযোগে তাঁকে ও অপর একজন সদস্য কাজী কামাল উদ্দিনকে শিক্ষক সমিতি থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার ভ্রমণসহ বিভিন্ন খাতে আয়-ব্যয়ে বর্তমান সমিতির আর্থিক অসততার ব্যাপারে সন্দেহ আরো গভীরতর হয়ে উঠেছে। আমাদের দৃঢ় ধারণা, আর্থিক অসততা, বিতর্ক ও প্রশ্নকে ধামাচাপা দিতেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

উপরে উল্লিখিত ঘটনা ও উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য এই যে, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্রবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কার্যনির্বাহী পরিষদ শিক্ষক সমাজের আস্থা হারিয়েছে। তাই, আমরা সচেতন শিক্ষক সমাজ গঠনতন্ত্রের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২২ এর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছি এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, আমরা আগে নিজেরা কথা বলি, এখন কিছু বলতে পারবো না।

নির্বাচন তারিখ পেছানোর ব্যাপারে বলেন, আমি একা একা এটা বলতে পারবো না, সবাই মিলে বসি তারপর সিদ্ধান্ত নিবো।

সাজ্জাদ/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর