ফটো সাংবাদিকতায় পঞ্চাশে আতাউর রহমান আতা

ফটো সাংবাদিকতায় ৪৯ পেরিয়ে ৫০-এ পা দিচ্ছেন আতাউর রহমান আতা। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে আজও ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেছেন তিনি। দেশ, সমাজ ও মানুষের সেবার লক্ষ্যে ক্যামেরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন আতাউর রহমান আতা। শেষ বয়সে এসেও তা ধরে রেখেছেন। দেশ, সমাজ ও মানুষের জন্য ছবি তুলে সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশ, সমাজ ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করে গেলেও নিজের জন্য কিছু করতে পারেননি এ আলোকচিত্রী। সকালে ক্যামেরা হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন সর্বত্র। সারাদিন শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ছবি তুলে তা পত্রিকায় প্রকাশ করে মানুষের সেবা করে ছুটে চলেছেন দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে। এ দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে গেলেও ক্লান্তি নেই মনে। ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেন সমাজের অবহেলিত মানুষের কাছে।তোলে আনেন সকল অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবহেলা মানুষের চিত্র।

স্বাধীনতাউত্তর সিলেটে প্রথম ফটো সাংবাদিকতা শুরু করেন আতাউর রহমান আতা। সিলেটের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও জাতীয় পত্রিকা আতাউর রহমান আতার কাছ থেকে ছবি নিয়ে তা পত্রিকায় প্রকাশ করতেন। একা ফটো সাংবাদিকতা শুরু করলেও পরে তিনি নিজ হাত দিয়ে তৈরী করতে থাকেন আরো ফটো সাংবাদিক। যার হাত ধরে সিলেটে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফটো সাংবাদিক। ফটো সাংবাদিকদের একসাথে রাখতে তিনি গড়ে তুলেছেন ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।

আতাউর রহমান আতা একজন সাদা মনের মানুষ। যে কেউ তার সাথে মিশতে পারে। বড়-ছোটো সবার সাথে তিনি হাসি দিয়ে কথা বলেন। যার সাথে না মিশলে বুঝা যাবে না তিনি কত বড় মনের মানুষ। সহজ-সরলতা কাকে বলে। ফটো সাংবাদিকরা কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যান তিনি। নিজের জীবনের চেয়েও অন্যের জীবনকে বেশী ভালোবাসেন তিনি। যার কারণে কারো বিপদের কথা শুনলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যেকোনো পরিস্থিতিতে। পাশে থেকে নিরবে সহযোগিতা করে যান।

৪৯ বছরের পথ চলায় অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ছুটে চলেছেন আপন গতিতে। পিছনে তাকানোর সময় নেই তার। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততো দিন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে দেশ, সমাজ ও মানুষের কথা বলে যাবেন এটাই যেনো তার অঙ্গীকার। দেশ, সমাজ ও মানুষের জন্য সততার সাথে কাজ করার কারণে বিভিন্ন সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন আতাউর রহমান আতা। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (১৯৯০), জাতীয় আলোকচিত্রী প্রতিযোগিতা (১৯৯৩), নান্দনীক সম্মান পদক (১৯৯৭), রোটারী ক্লাব অব সিলেট সেন্টাল এ্যাওয়ার্ড (১৯৯৭), শেখড়ের সন্ধানে এ্যাওয়ার্ড (১৯৯৭), লায়ন্স ক্লাব অব সিলেট কুশিয়ারা এ্যাওয়ার্ড (১৯৯৮-৯৯), উর্বশী আবৃত্তি পদক (১৯৯৮), তারুণ্য মেলা এ্যাওয়ার্ড (১৯৯৯), এসোসিয়েশন ফর ইয়ুথ এডভান্সমেন্ট এ্যাওয়ার্ড (২০০০), বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটি পদক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩), সফল সংগঠক পদক (২০০৯), সুরমা বয়েজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৬ সালে ফটো সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য সংবর্ধনা পান তিনি। রোটারী ক্লাব অব মেট্রোপলিটন এস্কেলেন্সি এ্যাওয়ার্ড ২০১৯, জেলা শিল্পকলা একাডেমী এ্যাওয়ার্ড ২০১৬।

আতাউর রহমান আতার জন্ম ৬ জুন ১৯৫৭ সালে সিলেট নগরীর মেন্দিবাগ এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। দেখতে দেখতে বয়স বাড়লেও মনোবলে এখনো ছোট বেলার মতো রয়ে গেছেন তিনি । ৬৫ বছর বয়সেও ক্যামেরা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিলেট বিভাগ। যেখানেই দুর্ঘটনা ঘটছে, সেখানেই ছুটে চলেছেন ক্যামেরা হাতে।
মুক্তিযুদ্ধের পর হতে সিলেটের ইতিহাস- ঐতিহ্য যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা, আনন্দ-বেদনা এসবের ছবি তুলে স্বাক্ষী হয়ে আছেন আতাউর রহমান আতা। যার কাছে গেলে সিলেটের ইতিহাসের কথা শুনতে পারবেন,ছবি ও দেখতে পারবেন। নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় সুমি স্টুডিও নামে একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান আছে। এই স্টুডিও থেকে এক সময় সিলেটের সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় ছবি সরবরাহ করা হতো। সেইসব ছবি পরের দিন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা হতো।

আতাউর রহমান আতা ১৯৭৩ সালে সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় পালের হাত ধরে ফটো সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে- সাপ্তাহিক দেশবার্তা, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক খবর, চিত্র বাংলা, ছায়াছন্দ, ইত্তেফাক, বাংলা বাণী, ইনকিলাব, জনতা, আজাদ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে তিনি দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকায় কর্মরত আছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ বহু খ্যাতিনামা ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান আতা’র ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। বিগত ১৯৯৫ সালে শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে জিয়ারতকালে তিনি প্রার্থনারত অবস্থায় তাঁর একটি অসাধারণ ছবি তুলেছেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ছবিটি বেশ সমাদৃত হয়।

পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থনারত সেই ছবিটি প্রচারণার পোস্টারে ব্যবহৃত হয় এবং এখনো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। পরে ছবি দেখে মুগ্ধ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আলোকচিত্রী আতাউর রহমান আতাকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কল্যাণে একদিন সেই শুভক্ষণটিও এসে যায় তার। আতা নিজ হাতে সেই ছবিটি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন এবং প্রশংসা অর্জন করেন। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয় কর্মজীবনে আতাউর রহমান আতা এমন অনেক দুর্লভ ছবি তুলেছেন যে ছবিগুলো মানুষ এবং সমাজের কথা বলেছেন। নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রের বিবেককেও।আতাউর রহমান আতা’র পঞ্চাশে পা দিচ্ছেন, এই শুভক্ষণে তাকে অনেকে জানাচ্ছেন উষ্ণ অভিনন্দন। একই সাথে তার সুস্বাস্হ্য ও শতায়ু প্রার্থনা করছেন গুণগ্রাহীরা।

সাইফুল/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর