রংপুরে ১জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১০ নং বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের আন্ধারকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে স্কুলটি। ওই স্কুলের রেজিস্টারে কত জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে তা সাংবাদিকদের দেখতে নারাজ প্রধান শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম।

বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছেন। অথচ ওই বিদ্যালয়েই দেওয়া হয়েছে অর্ধকোটি টাকার একটি ভবন। প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার ব‍্যক্তিবর্গ।

উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আন্ধার কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় -পঞ্চম শ্রেণী প্রযন্ত মাত্র এক জন শিক্ষার্থী কে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সেই শিক্ষার্থী কে পাঠ দান দিচ্ছেন চার শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়টির এই বেহাল দশা। তবে প্রধান শিক্ষক কৌশলে কত জন শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্টারে লিখে রেখেছেন তা জানতে চাইলেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়টি মিঠাপুকুর উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ১২-১৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। এলাকায় শিক্ষা বিস্তার ও জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এলাকার সচেতন ও গুণী লোকের সহযোগিতায় ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। একসময় ভরপুর শিক্ষার্থী ছিল এই বিদ্যালয়ে।

কিন্তু ধীরে ধীরে পড়ালেখার মান, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে ঝরতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বিদ্যালয় খোলা হলেও প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতার কারণে প্রভাব পড়ে বিদ্যালয়ের ওপর।

এলাকাবাসী জানায়, পড়ালেখার মান প্রতিষ্ঠানটিতে নেই বললেই চলে। ফলে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে এমনকি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে ভর্তি করায় অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাই ভালো শিক্ষা অর্জনের জন্য। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না। যে কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানরাও অন্য বিদ্যালয়ে পড়ে। আমিও বাধ্য হয়ে আমার সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।

আরেক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়ায় না। আমরা বারবার পড়ালেখা নিয়ে অভিযোগ করেছি। এমনকি সভাপতিকে বলেও কোনো ফল পাইনি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে ভালো পড়ালেখার জন্য অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।

প্রধান শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা সমাবেশ করে তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে পারিনি। স্থানীয় কিছু মানুষ নানাভাবে অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছে না। ফলে অভিভাবকরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করে দিয়েছেন।

সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন, আমরা তো আর প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে আনতে পারি না। আমাদের সরকারি স্কুল শিক্ষার্থী একজন কেন, ছাত্রছাত্রী না থাকলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এরকম তথ্য আমার জানা নেই এবং আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ ও আসেনি। তবে,এখন বিষয়টি জানতে পারলাম, আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। পরে উপরোক্ত বিষয়টি জানার জন্য একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

পলাশ/বার্তাবাজার/এইচ এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর