টেকনাফে মেরিন সিটি হসপিটালের ৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এমডি জামান

কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন সিটি হাসপাতালের প্রায় ৫ কোটি টাকা মেরে দিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে কথিত এমডি নুরুজ্জামান উরুফে বাক্কাইয়ার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও চিকিৎসকদের বেতন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ভূয়া চেক প্রদানের কারনে বেশ ক’টি প্রতারনা মামলাও চলমান রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগেও একই ভাবে চেক প্রতারনা মামলায় হাজত বাস করেছেন তিনি।

খোজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা সরকারী হাসপাতালের সামনে অবস্থিত মেরিন সিটি হাসপাতালটি ৬৫ জন শেয়ার হোল্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৯ সালে। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকেই স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলার নুরুজ্জামান এমডি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

এই হাসপাতালের শেয়ার হোল্ডার ৬৫ জন হলেও মোট শেয়ারের পরিমান ২০১টি। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয়েছে আড়াই লাখ টাকায়। সেই হিসেবে বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানটির কোন অনুমোদন নেই এবং পুরণ করতে পারেনি অনুমোদনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা জানায়, হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা লগ্নেই প্রতারণার আশ্রয় নেয় নুরুজ্জামান। যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভঙ্গ করে একক মালিকানা দেখিয়ে নিজের নামে অনুমোদনের আবেদন করেন তিনি।

পরে গেলো মাসে(অক্টোবোর ২২) অনুমোদনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিরিক্ষক দল পরিদর্শনে এলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং শেয়ার হোল্ডারদের অবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন আটকে যায়।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের নামে আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম থাকলেও নুরুজ্জামান ও কোহিনুর মিলে কোন ব্যাংক হিসাব ছাড়াই আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো।

প্রতি মাসে নির্বাহী কমিটিকে আয়-ব্যায়ের হিসাব প্রদানের কথা থাকলেও এসব নিয়মের কোন তোয়াক্কা করেনি তারা। বিগত দুই বছরে মনগড়া একটি হিসাব উপস্থাপন করে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে দুই কিস্তিতে ২১ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ প্রদান করে।
এসব কর্মকান্ডে বিব্রত হয়ে নির্বাহী কমিটির সভায় নুরুজ্জামানকে যৌত মালিকানাধীন ব্যবসার নিয়ম মেনে বারবার প্রতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা বজায় রাখার চাপ প্রয়োগ করলে কোহিনুরের প্রত্যক্ষ আশকারায় সে এসব কথার পাত্তা দেইনি। উল্টো এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কোহিনুরের হাতে হেনস্থার শিকার হয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

সর্বশেষ হাসপাতালের নামে যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বাবদ একের পর এক মোটা অংকের পাওনাদার এসে ভিড় করতে থাকে। অথছ শুরুতেই হাসপাতালের সমস্ত মালামাল ক্রয় বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বলে প্রায় কোটি টাকার বেশী আত্মসাৎ করে।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বিগত দুই মাস পূর্বে নির্বাহী কমিটির সভায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ৩০ অক্টোবর নির্বাহী কমিটির বৈঠকের সময় নির্ধারন করা হয় এবং ওই বৈঠকে চাপের মুখে পুঃনরায় বিগত সময়ের মোট আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদানের সিদ্ধান্তে রাজি হয় নুরুজ্জামান। সেই থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন যোগাযোগ না রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়।

এদিকে ক্লিনিকের সাবেক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুসরাত জানান, চাকুরী ছেড়ে দিয়ে যাওয়ার সময় নুরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বকেয়া বেতন বাবদ সাড়ে চার লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন । কিন্তু চেকটি ব্যাংকে ডিজঅনার হয়। এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বরিশাল আদালতে একটি চেক প্রতারনা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় আদালত তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন।

ডাঃ শফি জানান, তিনি প্রায় ১ বছর এই ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন। বেতন বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। টাকার জন্য বেশ কয়েক দফা নূরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে ওল্টো তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের নির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, নুরুজ্জামান প্রতারনা করে টাকা আত্মসাতের জন্য একজন মেডিকেল ওয়ার্ড বয়কে এনে সার্জারী ডাঃ সাজিয়ে করিয়েছেন সিজারিয়ান ডেলীভারী ও ব্রেস্ট সার্জারীরসহ জটিল কিছু অপারেশন। পরবর্তীতে জানতে পারি সে একজন ভূয়া ডাক্তার। সেই কথিত চিকিৎসক বর্তমানে ফার্স্ট ফুডের দোকানদার।

সর্বশেষ নুরুজ্জামান লাপাত্তা হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্টানটির কথিত চেয়ারম্যান কোহিনুর নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ২ মাস হাস্পাতাল পরিচালনা করেন। এই দুই মাসের কোন প্রকার হিসেব না দিয়ে নির্বাহী কমিটি ও বিনিয়োগকারীদের সাথে পরামর্শ না করে হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে অন্তত হাসপাতালের অর্ধ শতাধিক কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ও বেতন-ভাতা না পেয়ে চরম বেকায়দায় পড়েন।

এই বিষয়ে বিনিয়োগ কারীরা প্রতিবাদ করায় তাদেরকে উলটো আওয়ামীলীগ নেত্রী পরিচয় দিয়ে হুমকি দেয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নুরুজ্জামানের মুটোফোনে যোগাযোগ করে হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কোহিনুর নুরুজ্জামানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, বিনিয়োগকারীরা তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টেকনাফ ছাড়া করেছে।

বিনিয়োগকারীরা ইয়াবা বিরোধী অভিযানে পালিয়ে ছিলো এখন এলাকায় ফিরে এসে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। হিসাবের এই বিষয়ে নুরুজ্জামান তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাছাড়া হিসাবের ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না বলে জানান কোহিনুর।

খাঁন মাহমুদ/বার্তাবাজার/এইচ এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর