মাটিরাঙ্গা ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অনিয়ম-দুর্নীতির পাহাড়
মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাত,নানা অনিয়ম দুর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা মডেল রিসোর্স সেন্টারের (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) মডেল কেয়ারটেকার বেলাল হোসাইন ও ফিল্ড অফিসার শাহাদাত উল্লাহর বিরুদ্ধে।
লুটপাট,অনিয়ম,অর্থ আত্মসাতের কারসাজিতে অস্থিত্বহীন কেন্দ্র,পাঠাগারসহ রয়েছে নানা ফন্দি। বছরের পর বছর এভাবেই নয়-ছয় করে চলছিলো এ প্রতিষ্ঠান। এ সব বিষয়ে একাধিক বার লিখিত অভিযোগ হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। উল্টো দুর্নীতিতে অনেকে মিলেমিশে হয়ে গেছে একাকার বলে দাবী স্থানীয়দের।
‘সবার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত স্থলে অনিয়মের শতরূপের কারসাজিতে তারা গড়ে তুলছেন অবৈধ সম্পদ।
পুরো উপজেলায় প্রতি মাসে শিক্ষকদের নামে প্রায় কোটি টাকার বেতন দেওয়া হলে কোথায় যাচ্ছে সে টাকা? খাতা কলমে কেন্দ্রের নাম থাকলেও কাজের বেলায় অনিয়মের চিত্র স্বচোক্ষে না দেখলে ঘটনার আসল রহস্য উম্মোচন করা অসম্ভব।
বছরের পর বছর অনৈতিক ভাবে এই অপকর্ম করে গেলেও অভিযুক্তরা উল্টো হাকডাকে অনেকেই অসহায় এলাকায়। কিন্তু যেখানে বেড়ায় ক্ষেত খায় সেখানে ক্ষেত রক্ষা করবে কে?
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দুর্নীতি ও লুটপাট এবং কেন্দ্রে চুক্তি ভিত্তিক ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে
নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতায় ভেঙে পড়েছে সরকারের এ মহতী উদ্যোগ।
সাধারণ রিসোর্স সেন্টার ও অধিকাংশ টিউটোরিয়াল কেন্দ্রের অস্থিত্বই নেই এই প্রতিষ্ঠানের। মডেল ও সাধারণ রিসোর্স সেন্টার এ ২ টি করে পত্রিকা রাখার কথা থাকলেও ২০১৯ থেকে উক্ত সেন্টার গুলোতে পত্রিকা না রেখে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ,মডেল রিসোর্স সেন্টারে বৈদ্যুতিক মিটারের বিল বেশি দেখিয়ে টাকা উত্তোলন,শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা অনুসরণ না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময় প্রতি বছর শিক্ষক পরিবর্তণ ও নবায়নের অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি শিক্ষা সনদ জালিয়াতির দায়ে চাকরিচ্যুত হওয়া শহিদুল্লাহ নামে এক শিক্ষকের নামে উক্ত অভিযোগ উঠে। তবে মডেল কেয়ারটেকার বেলোল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শহীদুল্লাহ জাল সনদ দিয়ে শিক্ষকতার নামে প্রতারণা করে করোনাকালীন সময়ে বেতন ভাতা ভোগ করেছে।
অন্যদিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সুপার ভাইজার সাহাদাত উল্লাহ বলেন, আনিত অভিযোগের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নাই। ডিডি স্যার তদন্ত করছেন। তদন্তে যা উঠে আসে তাই হবে। ইসলামি ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়ির উপ-পরিচালক নাজমুস সাকিব বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে চার সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কমিটিতে থাকা সদস্যদের নাম ও তদন্ত বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছেনা। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে বিভিন্ন মিডিয়া। অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশুদের সর্বোচ্চ ছয় বছর বয়স পর্যন্ত
প্রাক-প্রাথমিক এবং ছয় বছরের উপরে সহজ কুরআন শিক্ষার আওতায় পড়ানোর কথা রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকে ২৫ এবং কুরআন শিক্ষায় ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিকে ৮৪টি এবং কুরআন শিক্ষায় ৭৫টি কেন্দ্র,
বয়স্ক ২টি এবং প্রতিটি কেন্দ্রের আওতায় একজন শিক্ষক রয়েছেন। প্রত্যেক শিক্ষক মাসিক বেতন পান পাঁচ হাজার টাকা। বছরে দুটি ঈদ বোনাসও পান শিক্ষকরা।
কেন্দ্রগুলো তদারকির জন্য একজন সুপারভাইজার, একজন মডেল কেয়ারটেকার রয়েছেন। তবে মাঠে নেমে এ বিষয়ের সাথে তথ্যের কোন মিল পাওয়া যায়নি। সঠিক তদন্ত করলে তাদের অনিয়মের ফিরিস্তিসহ অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার হিসাব মিলবে বলে জানান পার্বত্যবাসী।
মামুন/বার্তাবাজার/এইচএম