ভোলায় মা ছেলের মাদক ব্যবসা, ধ্বংসের পথে যুব সমাজ

মাদকমুক্ত ভোলা চাই প্রশাসন এমন স্লোগানে জিরো ট্রলারেন্সে থাকলেও ভোলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মোল্লা বাজার এলাকার বিপরীত। একটি পরিবার চরসামাইয়া, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়াসহ পুরো ভোলায় মাদকের ব্যবসা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করলেই উল্টো প্রাণ নাশকের হুমকি ও সাজানো মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আসছে ওই পরিবার। ইতিমধ্যে গাঁজা দিয়ে সামিম ও সজিব নামে দুইজনকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ও পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ডগের বাড়ীর মৃত্যু আবদুর রশিদের ছেলে মনির থাকতেন চট্রগ্রাম। এলাকায় সবাই জানেন মনির সেখানে চাকুরী করেন। হঠাৎ তিন চার বছর আগে মনির বাড়ীতে চলে আসে। শুরু হয় প্রকাশে এলাকায় মাদক ব্যবসা। চট্রগ্রাম থেকে মাদক এনে বাড়ীতে বসে মুদি মালামালের মত বেচাকেনা করেন মনির ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। গোপন সংবাদে পুলিশ ওই বাড়িতে একাদিকবার অভিযান করে মনিরের মা মনোয়ারা বেগম কে গত ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে গাঁজাসহ আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

মনিরের ছোট ভাই জাকিরের সদ্য সাবেক স্ত্রী রিপা বেগমকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ইয়াবাসহ আটক করেন পুলিশ। মনিরের ভগ্নীপতি মমিনকে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে গাঁজাসহ আটক করেন পুলিশ। এছাড়া গত ৩রা অক্টোবর সকালে প্রকাশে মদপান করে বেসামাল হয়ে বাড়ীতে ঘুরাফেরা করলে স্থানীয়রা আটক করে মনিরকে চরসামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।

পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মাতাব্বর ওই মনির কে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে পুলিশ বেসামাল অবস্থায় ঘুরাফেরা করছে এমন অভিযোগে কোর্টে প্রেরণ করলে ওইদিনই জামিনে মুক্ত হয় চরসামাইয়ার মাদক সম্রাট মনির। বেপরোয়া মনির আজ শুধু চরসামাইয়া নয় পুরো ভোলায় চট্রগ্রাম থেকে মাদক এনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ায় যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মনির ও তার এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ তার বাড়ীর আত্মীয় স্বজনরা। প্রকাশে বাড়ীর মধ্যে মনিরের দুই স্ত্রী, মা এবং বোনদের দিয়ে বেচাকেনা করাচ্ছে মাদক। বাড়ীর আত্মীয় স্বজনরা প্রতিবাদ করলে পুলিশের ভয় দেখিয়ে আতঙ্কে রাখেন মনির। নিজের ঘরে আগুন দিয়ে স্বজনদের হয়রানী করার অভিযোগ ও রয়েছে এই মনিরের বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শী সফিক হাওলাদার, রানু বেগম, সানু বিবি, তাসনুর বেগম, নাছির ঘোষ, জাফর বলেন, মনিরের পরিবারের এই অবৈধ ব্যবসার জন্য আজ এই বাড়ীতে কেউ আত্মীয় স্বজন করতে চায়না। মনিরের ভাই, ছোট ভাইয়ের বউ, মনিরের মাকে পুলিশ আটকের পর মানুষ মনে করে এই বাড়ীর সবাই মাদক ব্যবসা করে। আমরাও আতঙ্কে থাকি, কখন পুলিশ আসে। আবার এটাও টেনশনে থাকি কখন মনির লোভ লালসা দিয়ে আমাদের উঠতি বয়সী ছেলেদের এই অবৈধ ব্যবসা করায় নাকি। এসব টেনশনে থাকি সারাক্ষণ।

তাসনুর বেগম বলেন, রাত নাই দিন নাই হঠাৎ হোন্ডা দিয়ে দুইজন করে আসে আর সুপারিশ গাছের তলে কি যেন খোঁজে ছোট একটা পলিথিন বের করে নিয়ে যায়। ওই সুপারিশ গাছের পাশ দিয়ে প্রথমে মনির বা তার পরিবারের কেউ হেঁটে যায় পিছন দিয়েই হোন্ডার লোক আসে। মাদকচক্রের হোতাদের তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে চরসামাইয়া ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করার জন্য ভোলার পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

চরসামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মাতাব্বর বলেন, মনির একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী, ভোলার পুলিশ সুপার ও সদর সার্কেল কে আরো একমাস আগে বিষয়টি আমি জানানোর পর তারা সাথে সাথে বিট পুলিশিং অফিসার এস আই শাহাবুল কে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বরং মনির মদপান করে ছুরি নিয়ে বেসামাল অবস্থায় ঘুরাঘুরি করার খবর শুনে আমি একাদিকবার এস আই শাহাবুল কে বলেছি তিনি আসেনি। পরবর্তীতে ওসি সাহেব (শাহীন ফকির) কে ফোন দিলে তিনি এসআই নোমানকে পাঠালে ছুরিসহ পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন গ্রাম পুলিশরা কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় মনির আবার বাড়ীতে চলে আসেন।

এ বিষয়ে ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) ফরহাদ সরদার বলেন, মনিরকে আটকের বিষয়টি আমাকে কেউ জানাইনি তবে খোঁজ নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনিক/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর