ক্ষতবিক্ষত ধলাই ব্রীজ, থামছেনা পাথর খেকুদের আক্রমণ

সিলেটের সর্ববৃহৎ ধলাই ব্রীজের নীচ থেকে অবাধে পাথর ও চিপ তুলছে একটি চক্র। সাধারণ বারকি শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে সেই চক্রটি। চাঁদার বিনিময়ে সেই শ্রমিকরা ব্রীজের মাত্র কয়েক ফুট দূর থেকে পাথর ও চিপ তুলছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে ব্রীজটি। যে কোনো সময় দূর্ঘটনার শিকার হতে পারে ধলাই পূর্ব পাড়ের দুইটি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ধলাই ব্রীজ।

স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার প্রশ্রয়ে একটি চাঁদাবাজ চক্র দীর্ঘদিন যাবত ব্রীজের নীচ থেকে পাথর ও চিপ উত্তোলন করে আসছে। সূত্রে জানা যায়, ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির অসাধু এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব অপকর্ম। খোজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সেই চক্রটি বারকি নৌকাপ্রতি ৫০-২০০ টাকা চাঁদা করছে। ভোলাগঞ্জের আশেপাশের কয়েকটি ভাইব্রেটার ও ক্রাশার মিলে এসব পাথর ক্রয় করেন। সে সময় পুলিশের নাম উল্লেখ করে প্রতি নৌকা থেকে ৫০-২০০ টাকা আদায় করেন ভাইব্রেটর ও ক্রাশার মালিক পক্ষরা। ভোর পাঁচটা থেকে সকাল এগারটা পর্যন্ত চলে তান্ডব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন শ্রমিক জানান, সারাদিন বালু থেকে চালনি দিয়ে ৫/৬ শত টাকার চিপ বের করতে পারি। সেই চিপ ভাইব্রেটরের কাছে বিক্রয় করতে গেলে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে ৫০ টাকা চাঁদা নিয়ে গেলো লাইনম্যান ফয়জুর। তিনি আরও জানান, শরীর খাটিয়ে সারাদিন কাজ করে পাই ৫/৬ শত টাকা। আর তারা ঘাটে বসে প্রতিদিন চাঁদা পায় হাজার হাজার টাকা।

আরেকজন শ্রমিক জানান, ফয়জুর ছাড়াও এরশাদ আলী নামে আরেকজন আছে যিনি ১০ নং এলাকায় চাঁদা তুলেন।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সেই তথ্য। জানা যায়, প্রতিদিন দুইশতাধিক বারকি নৌকা থেকে ৫০-২০০ শত টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে সেই চক্রটি। এভাবে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করছেন ফয়জুর ও এরশাদ আলী নামের দুই চাঁদাবাজ।

সূত্রে জানা যায়, বারকি নৌকা থেকে চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি ভোলাগঞ্জ কাস্টমস ঘাট থেকে ১০ নং এলাকার মধ্যে স্থাপিত প্রতিটি ভাইব্রেটর থেকেও প্রতিদিন ১ হাজার টাকা চাঁদা তুলেন ফয়জুর রহমান ও এরশাদ আলী। প্রায় ১২ টি ভাইব্রেটর থেকে প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা চাঁদা তুলেন সেই চক্রটি।

ভাইব্রেটর মালিক পক্ষের একজন ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, বারকিওয়ালারা প্রায় সময় পাথর নিয়ে। যদিও পাথর উত্তোলন অবৈধ কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা সেসব ক্রয় করি। তাই নিজেদের বাচাতে চাঁদা দিতে হয়। তিনি আরও জানান, যারা পাথর ক্রয় করেন সবাই চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করে। চাঁদা দিলে হয়রানি হওয়ার ভয় থাকেনা।

এদিকে ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির এএসআই মুখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথর চুরদের সহায়তা অভিযোগ উঠেছে। চোরদের কাছ থেকে মুখলেছুর রহমানের আর্থিক সুবিধা আদায়ের তথ্য প্রমাণাদি এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। সে তথ্য উপাত্যের ভিত্তিতে গত ২১ সেপ্টেম্বরে বার্তা বাজারে ” এএসআই মুখলেছকে টাকা দিলে সাদা পাথর মিলে” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) লুৎফর রহমান তখন প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, আমাকে সেই তথ্যগুলো পাঠিয়ে দিন আমি তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এরপর তাৎক্ষণিক সময়ে সেই তথ্যগুলো সেখানে পাঠালেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মুখলেছুর রহমান এখনো ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়িতে দায়িত্ব পালন করছেন। এএসআই মুখলেছুর রহমান আর্থিক সুবিধা আদায় করে সাদা পাথর চোরদের সাথে আতাত করার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) লুৎফর রহমান প্রতিবেদককে জানান, মুখলেছুরের ব্যপারে এখনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি মনে হয়।

এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বরে সংবাদ প্রকাশের পূর্ব মুহুর্তে চাঁদাবাজ এরশাদ আলী প্রতিবেদকের কাছে ছুটে আসেন। এরশাদ আলী প্রতিবেদককে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে এএসআই মুখলেছুর রহমানের তথ্য প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। এ সময় এরশাদ আলীকে ভাইব্রেটর ও বারকি নৌকা থেকে চাঁদায়ের বিষয়ের জানতে চাইলে তিনি অকপটে তা স্বীকার করেন। প্রতিবেদককে জানান, আমরা ভাইব্রেটরে ব্যবসা করি। দিনশেষে পুলিশের টাকা গুলো কালেকশন করে ফাড়িতে দিয়ে আসি। এর বাইরে কিছু করিনা। আমরা কোনো পুলিশের লাইনম্যান না।

তারিকুল/বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর