পঞ্চগড়ে স্বজন হারানোর কান্নায় ভারী আকাশ-বাতাস

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। আউলিয়ার ঘাটে নদীর তীরে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ও হতাহতদের সন্ধানে ভিড় করছেন স্বজনরা।

গতকালের ঘটনার পর পর ঘটনাস্থল উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় শত শত মানুষ ভিড় করেন। এদের মধ্যে হতাহতদের অনেক স্বজন আছেন। নদীর পাড়ে চলছে স্বজনদের আহজারি। তাদের কান্নায় নদীর পাড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়েছে। আশপাশের পরিবেশ হয়ে উঠে ভারী। কেউ বোনের মরদেহের সামনে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদেন। কেউ আবার ভাইয়ের মরদেহের সামনে মাতম করছেন। কেউ কেউ নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটছেন। আউলিয়া ঘাট এলাকার করতোয়া পাড়ে স্বজন হারানোর এই বিলাপে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন কেউ।

স্থানীয়রা জানান, ধারণ ক্ষমতার বাহিরে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি শতাধিক যাত্রী নিয়ে আউলিয়া ঘাট থেকে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) যাচ্ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশ সনাতন ধর্মের অনুসারী। তারা শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে ওই মন্দিরে যাচ্ছিলেন। তিন গুণের বেশি যাত্রী নিয়ে যাত্রার কিছুদূর যাওয়ার পরই দুই দিকে দুলতে থাকে নৌকাটি। এ সময় মাঝি নৌকাটি তীরে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আতঙ্কিত যাত্রীদের হুড়াহুড়িতে নৌকাটি ডুবে যায়।

মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মহালয়া উপলক্ষে সকাল থেকেই ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকাটি উল্টে যায়। যারা সাঁতার জানতেন তারা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও, নৌকায় থাকা নারী-শিশু পানিতে ডুবে যায়।

এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক প্রদান করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও মরদেহ উদ্ধার হতে পারে।

আমিন/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর