এক দশক পর ধরা পড়লেন ফাঁসির আসামি

বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালে রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয় বাসু নামে এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০২১ সালে আদালত ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এ মামলার প্রধান আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আলকেসকে শুক্রবার বরিশাল শহর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি দল।

জামিন নিয়ে প্রায় এক দশক পলাতক ছিলেন আলকেস। বাসু হত্যার পর ঢাকার সাভার এলাকায় নিজের নাম ঠিকানা গোপন করে বসবাস শুরু করেন। তবে একস্থানে বেশিদিন থাকতেন না তিনি। কখনো বাস চালক, আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে ট্রলার ডাকাতিতেও জড়ান।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার আলকেস মামলার বাদী চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়া (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা। চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া আপন ভাই। বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ১৪ মে বিকেল ৫টার দিকে আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে বাসু মিয়ার ওপর আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে আলকেস তার কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে বাসু মাথায় লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই চিনু মিয়া বাদী হয়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জন আসামির বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আলকেস। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

মামলার তদন্ত শেষে মোট ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল হলে আদালত বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি মো. আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুকে মৃত্যুদন্ড এবং আসামি কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

এদিকে জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার আলকেসদের সঙ্গে আজাহার ও সানুর মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে আলকেসদের হামলায় সমিতির সদস্য আজাহার ও সানু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এই ডাবল মার্ডারের মূল আসামিও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস। ওই ঘটনায় আলকেসের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন।

আত্মগোপনে পেশা-নাম বদল

বাসু হত্যা মামলায় চার মাস হাজতবাস করে জামিন নিয়ে এলাকায় অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করেন আলকেস। বিরোধের জেরে বাসু হত্যা মামলার অপর আসামি আজাহার এবং সানু নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। সাভার থানা থেকে ওয়ারেন্ট জারির পর পালায় আলকেস।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সংরক্ষণ করার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় ৪৩১/৩৪ ধারায় হওয়া মামলারও পলাতক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আলকেস। এছাড়াও তিনি শাহ আলী থানায় ৩৯৯/৪০২ ধারায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

সব মামলার চাপে আত্মগোপনে চলে যায় আলকেস। গত ১০ বছর ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের নাম-পরিচয় ও পেশা বদলে ফেলেন। প্রথমে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি হত্যা, ডাকাতি করতেন। পরে বরিশাল গিয়ে ট্রাকের হেল্পার ও পরে চালক হিসেবে কাজ করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে পড়ে একজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় মামলা হলে তিনি পুনরায় পালিয়ে কুয়াকাটায় মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করত বলে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারের পূর্ব পর্যন্ত আলকেস গত দেড় বছর একটি দূর পাল্লার পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করে আসছিল।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর