এএসআই মুখলেছকে টাকা দিলে সাদা পাথর মিলে

ভূত ছাড়াতে সর্ষের ব্যবহার হয়। অথচ সেই সর্ষেই যদি ভূত চাপে তখন ভূত ছাড়াবে কিভাবে? পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর চুরি ঠেকাতে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কঠোর নজরদারীর মধ্যেও থেমে নেই চোরাকারবারিদের দৌরাত্ব। আর সেই চোরাকারবারিদের ইন্ধন যোগাচ্ছে খোঁদ পুলিশের এক এএসআই। ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির এএসআই মুখলেছুর রহমান চোরাকারবারিদের প্রশ্রয় ও ইন্ধন দিচ্ছে বলে একাধিক তথ্য মিলে।

সূত্রে জানা যায়, একদিন পরপর রাতের বেলায় ধলাই নদীতে টহল টিমপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এএসআই মুখলেছুর রহমান। দায়িত্ব পালনকালে পাথর চোরদের সাথে আতাঁত করে নৌকা প্রতি এক হাজার টাকার বিনিময়ে দায়িত্বকালীন সময়ে সাদা পাথর সরানোর তথ্য পাওয়া যায়।

গত দুই মাসের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, এএসআই মুখলেছুর রহমান তার ডিউটিকালীন সময়ে পাথর চোর চক্রের সাথে আতাঁত করে আসছে। প্রতি রাতে ৭/৮ হাজার টাকা নিজ পকেটে পুরে নিচ্ছেন তিনি। বিনিময়ে চোরদের ভোলাগঞ্জ পর্যটন কেন্দ্র ও রোপওয়ে এলাকা থেকে পাথর চুরির সুযোগ করে দেওয়া হয়।

সূত্রে আরও জানা যায়, এএসআই মুখলেছুর রহমানের এই অপকর্ম কোম্পানীগঞ্জ থানা স্টেশন পর্যন্ত পৌছায় না। গভীর রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্টেশন ব্যস্ত থাকার সুযোগে ও অন্ধকারচ্ছন্ন ধলাই নদীতে এএসআই মুখলেছুর রহমান অর্থের বিনিময়ে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবত। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে পাথর চোর চক্রের সদস্যদের ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ৮ বারকি নৌকা পাথর চুরি করতে সহায়তা করেন তিনি। এসব পাথর ভোলাগঞ্জ ১০ নং এলাকায় এবং দয়ারবাজার-নতুন বাজার সংযোগ সড়কের ভাঙ্গা নামক স্থানে আনলোড করেন পাথর চোরেরা।

বিগত কয়েকদিন পূর্বে গভীর রাতে ধলাই নদীর পূর্ব পাড়ে সুজনের ঘাট নামক স্থানে প্রায় ৪০টি বারকি নৌকা দিয়ে সাদা পাথর এনে মজুদ করে রাখেন স্থানীয় একটি পাথর চোর চক্র। এরপর মজুদকৃত সেই পাথর গুলো ইঞ্জিন চালিত ছোট ছোট ট্রলি দিয়ে স্টোন ক্রাশার মিলে বিক্রি করেন চক্রটি। কৌতূহলের বিষয় হচ্ছে ওই দিনও ধলাই নদীতে টহলরত ছিল এএসআই মুখলেছুর রহমান। সুজনের ঘাটে চুরিকৃত সাদা পাথর মজুদের ঘটনাটি ডিউটিরত এএসআই মুখলেছুর রহমানকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে আসতে গড়িমসি করেন। তখন প্রতিবেদককে তিনি জানিয়েছিলেন, ভোলাগঞ্জ বাংকারে আছেন এবং আসতেছেন। বাংকার থেকে নৌকাযোগে সুজনের ঘাটে আসতে সময় লাগে ১০/১১ মিনিট, কিন্তু দীর্ঘ এক ঘন্টা পর এএসআই মুখলেছুর রহমান সুজনের ঘাটে আসেন। মুখলেছুর রহমান আসার পরেও পাথর চোরেরা ট্রলি দিয়ে পাথর পরিবহন করছিল। ঘটনাস্থলে আসার পরে মুখলেছুর রহমানকে বার্তা বাজার প্রতিবেদক আবারও ফোন করলে তিনি সাদা পাথর চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এসময় অল্প কিছু পাথর জব্দ করেন বলেন জানান তিনি। জব্দকৃত পাথরের একটি ছবি প্রতিবেদককে দিতে বললে তিনি ছবি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এক ঘন্টা পূর্বে ঘটনাস্থালে আসলে এএসআই মুখলেছুর রহমান চোরাই সাদা পাথর জব্দ করতে পারতেন।কিন্তু এক ঘন্টা সময় গড়িয়ে এসে সাদা পাথর চুরদের বিশেষ সুযোগ করে দেওয়ার ইঙ্গিত মেলে। তৎকালীন সময়ে পাথর চুরির বিষয়টি কোম্পানীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত চক্রবর্তীকে জানালে তিনি অস্বীকার করেন। পরবর্তিতে এএসআই মুখলেছুর রহমান পাথর চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

এএসআই মুখলেছুর রহমান ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়িতে যোগদানের পর থেকেই পাথর চুরদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। অর্থের বিনিময়ে পাথর চুরদের সহযোগীতা করার একটি হোয়াটসঅ্যাপ তথ্য প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে পাথর চোরের সাথে অর্থ লেনদেনের অনেক তথ্য উঠে এসেছে। সেই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে দেখা যায়, ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটের সময় ০১৭১৪০১১৪২৯ নাম্বারটি পাথর চোরকে সেন্ড করেন এএসআই মুখলেছুর রহমান। এরপর একইদিন রাত ০৯টা ১০ মিনিটের সময় সেই নাম্বারটা আবারও সেন্ড করেন এএসআই মুখলেছুর রহমান। তখন তিনি সাদা পাথর চোরকে চার হাজার টাকা নগদ একাউন্টে দেওয়ার জন্যে নির্দেশ দেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে দুই একদিন পরপরই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত সেই পাথর চোরের সাথে যোগাযোগ রাখেন তিনি। গত ৩০ আগস্ট রাত ০২টা ২৪ মিনিটের সময় এএসআই মুখলেছুর রহমানের সাথে বার্তা বাজার প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট হয়। সে সময় অর্থ লেনদেনে ব্যবহৃত ০১৭১৪ ০১১৪২৯ নাম্বারের মালিককে তথ্য যাচাই করলে তিনি জানান, নাম্বারটা আমার (এএসআই মুখলেছুর রহমান)। এরপর অদ্য ২১ সেপ্টেম্বর সেই নাম্বারের অর্থ লেনদেনের বিষয়ে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি জানান, নাম্বারটা তার না বলে অস্বীকার করেন। এছাড়াও পাথর চোরদের সাথে অর্থ লেনদেন এবং অদ্য সংঘঠিত পাথর চোরদের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অস্বীকার করেন তিনি। পাথর চোরদের সখ্যতা গড়ে তুলা এবং অর্থ লেনদেনের একাধিক তথ্য প্রমাণ বার্তা বাজার প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

এএসআই মুখলেছুর রহমানের সাথে সাদা পাথর চোরদের অর্থ লেনদেনের বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) লুৎফর রহমান বার্তা বাজার প্রতিবেদককে জানান, আমাকে সেই তথ্যগুলো পাঠিয়ে দিন আমি তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

তারিকুল/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর