মালয়েশিয়ায় বড় ভাইয়ের মরদেহ গোপন! হাসপাতালে মিললো অর্ধগলিত মরদেহ

মালয়েশিয়ায় ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে হার্ট এ্যাটাকে মারা যান বগুড়া জেলার কাহালু থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মোঃ উজ্জ্বল হোসেন (৩৪)। মালয়েশিয়ায় থাকা আপন ছোট ভাই নিহারুল ইসলাম পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছেন উজ্জ্বলের মরদেহ দাফন করে ফেলেছেন। আসল সত্য বেরিয়ে আসার পর জানা গেল বড় ভাই উজ্জ্বলের মৃতদেহ দাফন করা হয়নি। হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে যান ছোট ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী নিহারুল ইসলাম। মৃতের স্ত্রী রেশমা বেগম জানেন তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এখনো নিহারুল ইসলাম রেশমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন।

তবে কি কারণে আপন ছোট ভাই নিহারুল এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে পরিবার থেকে জানা যায়, নিহারুল বৈধ পারমিট না থাকায় হয়তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

মরদেহ হাসপাতালে রেখে গোপন করার বিষয়টি তখনই ফাঁস হয় যখন ৩ মাস পর গতকাল এই প্রতিবেদকের কাছে মালয়েশিয়ার ইপুহ হসপিটাল থেকে ফরেনসিক কর্মকর্তা ফোন করেন। ঐ কর্মকর্তা বলেন এক বাংলাদেশির মরদেহ ৩ মাস ধরে পড়ে আছে হসপিটালেরর হিমঘরে। আমরা তার পরিবারের সন্ধান এখনো পাইনি। মরদেহের অবস্থা খারাপ, দ্রুত দাফন করার ব্যবস্থা করতে হবে।

তারপর ফরেনসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজ্জ্বলের বাড়ি বগুড়া জেলার কাহালু থানায়। তার সাথে কোন পাসপোর্ট ছিল না। তখন বগুড়া প্রশাসন সহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে উজ্জ্বল এর স্ত্রী রেশমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে মরদেহ এখনো হাসপাতালে পড়ে আছে এই কথা শুনার পর তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

তিনি কাদঁতে কাঁদতে বলেন, উজ্জ্বলের আপন ছোট ভাই মালয়েশিয়া থেকে জানিয়ে দিয়েছে উজ্জ্বল হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ায় তাকে এখানেই দাফন করা হয়েছে। তার কারণ দেশে মরদেহ পাঠাতে অনেক টাকার দরকার। উজ্জ্বলের স্ত্রী আরো বলেন, ভাই হয়ে ভাই এর সাথে এমন প্রতারণা কিভাবে করতে পারে? আমার স্বামী মারা গেছে আমার ছোট দেবর এখনো আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। এমন কি আমার স্বামীর মৃত্যুর খবরটা পর্যন্ত এখনো দেয়নি। আমি প্রতিবেশীর কাছ থেকে শুনেছি আমার স্বামী মারা গেছে। তারপর অনেক কান্নাকাটি করেছি কিন্তু নিহারুল কোন তথ্য দেয়নি।

তবে পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় মালয়েশিয়াস্থ প্রবাসী কমিউনিটির কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন তারা। আর দূতাবাসে বাজেট যথেষ্ট না থাকায় সরকারি খরচে মৃতদেহ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচ বহন করার জন্য প্রবাসীরা সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব মরদেহের দাফন সম্পন্ন করতে হবে কারণ মৃতদেহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তখন প্রতিবেদকের সাথে সাথে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মান্যবর গোলাম সারোয়ারকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিবেন বলে জানিয়েছেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করে আরো বলেন, এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আশরাফুল/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর