মুক্তিযোদ্ধা শশুরকে পেটালেন মেয়ে জামাতা, থানায় অভিযোগ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতার ভাগ না পেয়ে শশুরকে পেটালেন মেয়ে জামাতা। জামাতা আব্দুস সুবাহানের হামলায় আহত হয়ে শশুর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শুক্কুর আলী (৯২) বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে শশুরের মুখের দাড়ি টেনে ছিড়ে নিলেন। গত ০৭ সেপ্টেম্বর সকাল ০৮ টার সময় উপজেলার বিজয় পাড়ুয়া হাওর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় উপজেলা জুরে তোলপার শুরু হয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সফি উদ্দিন রেণুসহ সংসদ সন্তান কমান্ড সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হাজী ফারুক আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক কবির মিয়াসহ সুশীল সমাজ। নেতৃবৃন্দরা জানান, একজন শতবর্ষি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার শরীরে কিভাবে আঘাত করা হয়? আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্যে পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি। দ্রুত তাদের গ্রেফতার না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবো।

জানা যায়, উপজেলার বিজয় পাড়ুয়া হাওর গ্রামের মৃত ছৈদ উল্লাহর পুত্র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শুক্কুর আলীর (৯২) কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন তারই মেয়ে জামাতা আব্দুস সুবাহান (৬৫)। শতবর্ষি শুক্কুর আলীর কোনো রুটিরুজি না থাকায় সরকারী ভাতার উপর নির্ভর করে সংসার চলে।

নিজের চিকিৎসা খরচ ও সংসারের ভরন পোষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকেই বহন করতে হয়। দিনান্তে পান্তা ফুড়ায় শুক্কুর আলীকে তার মেয়ে জামাতা আব্দুস সুবাহানের আর্থিক দাবী মেটাতে হয় সব সময়। আর সেই দাবী পূরণ করতে না পারলে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালায় জামাতা ও নাতিরা। ঘটনার দিন সকালে শুক্কুর আলী তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের জন্যে উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। বাড়ির পাশের রাস্তায় উৎপেতে থাকা সুবাহান ও ৮/৯ জন ব্যক্তি শুক্কুর আলীকে টাকা দেওয়ার জন্যে চাপ সৃষ্টি করেন। দুই পক্ষের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে শুক্কুর আলীকে মারধর করেন সুবাহান ও অন্যান্যরা।

এক পর্যায়ে শুক্কুর আলীর দাড়ি ধরে টেনে হেচড়াতে শুরু করেন আব্দুস সুবাহান। এক পর্যায়ে দাড়ি টেনে ছিড়ে ফেলে। তাদের মারধরে ঘোরতর আহত অবস্থায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শুক্কুর আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করানো হয়। চাঁরদিন পরে শুক্কুর আলী বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় ৮ জনের নাম নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শুক্কুর আলী প্রতিবেদককে আক্ষেপ করে জানান, এই রকম ভাবে অপদস্ত হব বলেকি দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছি? আমি ভালো করে হাটতে পারিনা। কানে কম শুনি। চোখে কম দেখি। সংসারে অভাব অনটন। ভাতা বাবদ যা পাই তা দিয়েই সংসারের খরচসহ ঔষধপত্র কিনতে হয়। এরই মাঝে মেয়ে জামাতার অর্থ দাবী পূরণ করতে হয়। টাকা না দিলে বিভিন্ন মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। আমি আব্দুস সুবাহানসহ হামলাকারীদের শাস্তি চাই।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর