সিলেটে ৫’দফা দাবীতে শুরু হয়েছে শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

সিলেটে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছে পরিবহন শ্রমিকদের ৬টি রেজিস্ট্রার্ড সংগঠনের নতুন পরিষদ ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’।এ সংগঠনের ডাকেই সিলেট বিভাগ জুড়ে কঠোর ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা।কঠোর ধর্মঘটের কারণে ফাঁকা রয়েছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো।পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষেরা।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে সিলেট নগরীর তালতলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্রা ও আম্বরখানা পয়েন্ট ঘুরে শ্রমিকদের লাঠি হাতে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। যারা জরুরি কাজে ঘর থেকে বের হয়েছেন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তারা ঘাটে ঘাটে পড়ছেন শ্রমিকদের রোষানলে।এসময় দীর্ঘ পথ হেঁটেই গন্তব্যে ফিরছেন অনেক সাধারণ মানুষ,এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে,স্কুল,কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকসা ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করছেন।আর এই সুযোগে রিকসাওয়ালা ও শেয়ার ড্রাইভ এর মোটরসাইকেল ওয়ালারা বিশ টাকার ভাড়ার স্থলে নিচ্ছেন একশো টাকা।কেউ কেউ সাধারণ মানুষকে কাবুর মুখে ফেলে ইচ্ছে মতো বাড়িয়েই ভাড়া নিচ্ছেন।

এই ভোগান্তির তালিকায় চাকুরীজীবী,অসুস্থ রোগী ও বিদেশ যাত্রীরাও রয়েছেন।শ্রমিকদের কড়া পিকেটিং এর মুখে কোথাও কোথাও কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই ড্রাইভারের উপর চড়াও হচ্ছেন শ্রমিকরা।জরুরি কাজে বের হওয়া চালকের গাড়ীর চাবি কেড়ে নিচ্ছেন তারা এবং গাড়ী ভাংচুর করতে উদ্যত হচ্ছেন,এমনটিই দেখা গেছে নগরী জুড়ে। নগরীর আম্বরখানা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই রোডের বড়বাজার রাস্তার মোড়ে একজন বিদেশযাত্রীর গাড়ি আটকে রেখে শ্রমিকরা চাবি কেড়ে নিলে আমাদের প্রতিবেদকের সহযোগিতায় চাবি ফিরে পান ঐ চালক।এছাড়াও নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী,হুমায়ূন রশীদ চত্ত্বর,উত্তর সুরমার তেমুখী পয়েন্ট,কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড,শাহী ঈদগাহ,টিলাগড়েও শ্রমিকরা ওঁৎ পেতে রয়েছেন।শ্রমিকদের পিকেটিংকালে একাধিক স্থানে গাড়ী ভাঙচোরেরও খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়,সিলেট বিভাগের সকল পরিবহন শ্রমিক বেশ কিছুদিন ধরে ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নানা সময়ে কর্মবিরতিসহ মিছিল-সভা সমাবেশ করে আসছেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার ও উপ-কমিশনারের (ট্রাফিক) অপসারণ, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও রেকার বাণিজ্যসহ মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বন্ধ, সিলেটে শ্রম আদালতের প্রতিনিধি শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারকারী নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, ভাঙাচোরা রাস্তাগুলোর দ্রুত সংস্কার এবং নতুন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ ও বিক্রয়কৃত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া। এ ছাড়াও অনুমোদনহীন গাড়ি যেমন-অটোবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ডাম্পিংকৃত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

পরিবহন শ্রমিকদের এ আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছে তাদেরই ৬টি রেজিস্ট্রার্ড সংগঠন। এই ৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’র ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও কর্মবিরতির ঘোষণা জানিয়ে সোমবার সিলেট জুড়ে মাইকিং করেন পরিবহন শ্রমিকরা।সূত্র জানায়,প্রশাসন শ্রমিকদের ধর্মঘট না করতে আহবান করলেও এতে কর্ণপাত না করেই আন্দোলনের ডাক দেন শ্রমিক নেতারা।

সাইফুল/বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর